মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী হক নগর স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ৬:৫৫:৪৭ অপরাহ্ন
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ : মহান মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের সাক্ষী সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা (হক নগর)। বিজয়ের মাসের শুরু থেকেই এখানে দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর এলেই অনেক লোকজনের সমাগম ঘটে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই এলাকায়। ঐতিহাসিক ‘হক নগর’ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থিত। মেঘালয়ের পাদদেশে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা এই স্থানে রয়েছে ‘হকনগর’ শহীদ স্মৃতিসৌধ। কয়েক বছর পূর্বেই জেলার পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণার পর ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে বাঁশতলা (হক নগর)। এখানকার প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন উৎসাহী পর্যটকরা।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য নারী-পুরুষ জড়ো হয়েছেন ‘হক নগর’ এলাকায়। নজরকাড়া মনোরম দৃশ্যের পাহাড়ের পাদদেশে অনেকেই ছবি তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় গৌরবোজ্জল স্থানটি একনজর দেখতে ছুটে এসেছেন রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা চাকুরীজীবী কলিম উদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। মূলত তিনি বেড়াতে এসেছিলেন সিলেট নগরীতে। স্থানীয় একজনের কাছে ঐতিহাসিক হক নগরের গল্প শুনে শহীদ স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, ছাতক থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে সড়ক পথে হক নগর এসেছেন তিনি।
এলাকার চারদিকে শুধু সবুজের হাতছানি। শেষ বিকেলে পাখির কলকাকলী ও মিষ্টি রোদে মৃদু বাতাস প্রাণ জুড়িয়ে দিয়েছে। এখানকার ছোট টিলা-পাহাড়ে সাজানো নজরকাড়া দৃশ্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পাহাড়ি ঝরনা চোখে পড়ার মতো। মৌলা নদীর ওপর স্লুইচগেট দেখতে অনেকটা জলপ্রপাতের মতোই। পাহাড়ি ঝরনার পাশে স্লুইচগেট আলাদা সৌন্দর্য্যরে সৃষ্টি করেছে। তার মতো অনেকেই এখানে আসেন বেড়াতে। ভারতীয় সীমানার কোলঘেঁষা বাংলাদেশের জুমগাঁও গারো পাহাড়ের ২৬টি পরিবারের বসবাস। পাহাড়ি এই গ্রামে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের লোকজনও এখানে আগত পর্যটকদের স্বাগত জানায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, (হক নগর) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ৫নং সেক্টরের চেলা (বাঁশতলা) সাব-সেক্টর সদর দফতর ছিলো। এই সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন এএস হেলাল উদ্দিন। পরবর্তী সময়ে ছিলেন লে. আব্দুর রউফ ও লে. মাহবুব। সেক্টরে যুদ্ধ পরিচালনায় সহযোগিতা করেন মরহুম এমএন আব্দুল হকসহ আরো অনেকেই। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে এমএনএ হক, ডাঃ হারিছ আলী, হেমেন্দ্র দাস পুরকায়স্থ, ডাঃ আব্দুল মছব্বির (বাঁশতলা) মফিজ আলী (বড়খাল), সামছুল হক চেয়ারম্যান (বাংলাবাজার), ডাঃ আহসান উল্লাহ (ভাঙ্গাপাড়া), ডাঃ আব্দুল হামিদ (টেংরাটিলা) মদন মোহন নন্দী (হাসাউড়া), আব্দুল কাদের মেম্বার (কান্দাগাঁও) সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বাঁশতলা সীমান্তে সমবেত হয়ে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাঁশতলাসহ এর নিকটবর্তী আশাপাশ এলাকায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের এখানেই দাফন করা হয়।