হিংসা জীবনের পরম শত্রু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ৬:২৮:৫৮ অপরাহ্ন
মো. লোকমান হেকিম
বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও রুচির এক মহাবিপর্যয় লক্ষ করা যাচ্ছে। একে অন্যকে অসম্মানের মধ্যেই যেন সব আনন্দ ও সার্থকতা। হিংসা থেকেই এ ধরনের মনোভাবের জন্ম। মানুষকে অসম্মান করে, হিংসা করে সাময়িক আনন্দ পাওয়া যায় কিন্তু বড় হওয়া যায় না। একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠি অনেক কিছু জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে; কিন্তু তার আগে সে নিজেই জ¦লে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তেমনি হিংসুক অন্যকে হিংসা করে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সে নিজেই হয় তার হিংসুটে মনোভাবের কারণে। ইসলাম ধর্মে হিংসা করা হারাম, মহাপাপ।
হিংসা আত্নবিধ্বংসী বদগুণ। আদম (আ:) এর প্রতি হিংসার কারণে শয়তান আল্লাহ পাকের অবাধ্য হয়েছিল এবং আল্লাহর রহমত থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়েছে। হিংসা আমাদেরকে ধ্বংসের শেষ ধাপে নিয়ে যাবে। তাই মানবচরিত্রের মাঝে যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে বেশ কিছু খারাপ দিক । সেসব খারাপ দিকের মধ্যে অত্যন্ত ভয়াবহ একটি রোগ হচ্ছে হিংসা। হিংসা একজন মানুষের অন্যান্য সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। হিংসা রোগে আক্রান্ত মানুষ কখনো পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ- সর্বক্ষেত্রে অনেক অশান্তি বিশৃঙ্খলার নেপথ্যে কাজ করে এই হিংসা। হিংসা সমাজজুড়ে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে দেয়। ধ্বংস করে দেয় সৌহার্দ্য সম্প্রতির মজবুত দেয়াল। হিংসা মানে কি? হিংসা মানে হচ্ছে- অন্যের ভালো কিছু দেখে ঈর্ষায় কাতর হয়ে সেটা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কামনা করা। হিংসাকে আরবিতে হাসাদ বলে। সৌহার্দ্য সম্প্রীতির অনন্য শিক্ষালয় ইসলাম অন্যের প্রতি হিংসা করা বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়াকে সম্পূর্ণরুপে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের স্থলে সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করে বলেছেন, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সে জন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে? (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৪)।
হিংসা-বিদ্বেষ একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি। মানুষের হীন মনমানসিকতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, সম্পদের মোহ, পদমর্যাদার লোভ-লালসা থেকে হিংসা-বিদ্বেষের উৎপত্তি ও বিকাশ হয়। হিংসা-বিদ্বেষ মুমিনের সৎকর্ম ও পুণ্যকে তার অজান্তে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে। মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, শঠতা-কপটতা, অশান্তি, হানাহানি প্রভৃতি সামাজিক অনাচারের পথ পরিহার করে পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবব্ধ হবে এবং ইসলামের পরিশীলিত জীবনবোধে উদ্বুব্ধ হবে এটিই ধর্মের মূলকথা। তাই নবী করিম (সা:) সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। কেননা, হিংসা মানুষের নেক আমল বা পুণ্যগুলো এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ¦ালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ (আবু দাউদ)। হিংসা মানুষকে কত অধঃপতনে নিয়ে যায়, তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ঈর্ষা ও হিংসা প্রায় একই রকম আবেগ, তবে হিংসাকে বলা হয় ঈর্ষার চরম বহিঃপ্রকাশ। ঈর্ষাকাতরতা হিংসার পর্যায়ে চলে গেলে আক্রোশবশত মানুষ হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারে। হিংসুক ব্যক্তি অন্যের ভালো কিছু সহ্য করতে পারে না, কাউকে কোনো উন্নতি বা ক্ষমতায় অভিষিক্ত দেখলে অন্তরে জ¦ালা অনুভব করে। এহেন অশোভন আচরণ ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। হিংসুক ব্যক্তি যখন হিংসাত্নক কাজে লিপ্ত থাকে, তখন তাকে পরিত্যাগ করা অবশ্যকর্তব্য। এ জন্য হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকার লক্ষ্যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য পবিত্র কোরআনে দিকনির্দেশনা প্রধান করা হয়েছে, ‘আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, যখন সে হিংসা করে।’ (সূরা আল ফালাক, আয়াত: ৫)। তাই ঈর্ষা, ক্রোধ, ভয় জীবনের পরম শক্র।