সিলেটে পদ ১৩ শ’ আবেদন ৬২ হাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ৩:০০:০৮ অপরাহ্ন
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা জানুয়ারীতে
এমজেএইচ জামিল : দেশব্যাপী শুরু হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি। জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময় হতে পারে এ পরীক্ষা। দেশের ৬৪ জেলাকে ৪ ভাগে ভাগ করে ৪ ধাপে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। একটি ধাপে ১৬টি জেলার পরীক্ষার্থীগণ অংশ নিবেন। ফলে শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নিয়োগ প্রার্থীগণ। সিলেট বিভাগের ১ হাজার ৩৭৯ টি পদের বিপরীতে পরীক্ষায় বসছেন ৬২ হাজার ৬০৭ জন পরীক্ষার্থী। ১ টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ৪৫ জন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে,করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশী সময় ধরে বন্ধ থাকা বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দ্রুত সময়ে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই আলোকে পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ। ৩২ হাজার পদের বিপরীতে আবেদনকারী ১৩ লাখ পরীক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে বর্তমানে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের ১ হাজার ৩৭৯টি পদ শূণ্য রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৩৫৫ টি, সুনামগঞ্জ জেলায় ৬৪৩টি, মৌলভীবাজার জেলায় ১৮৬টি ও হবিগঞ্জ জেলায় ১৯৫টি পদ শূণ্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলা। কারণ এই জেলায় সর্বোচ্চ ৬৪৩ জন শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বদলী ও অবসরজনিত কারণে বেশকিছু সংখ্যক পদ খালি রয়েছে। এছাড়া করোনা মহামারীর কারণে নিয়োগ পরীক্ষা যথাসময়ে না হওয়ায় এই সংকট আরো ঘনীভুত হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শীঘ্রই এর সমাধান হবে বলে জানান তারা।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের মোট পদের সংখ্যা ২৪ হাজার ৩৬৩টি। এর মধ্যে বর্তমানে ২২ হাজার ৯৮৪ জন সহকারী শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। শূন্য রয়েছে ১ হাজার ৩৭৯টি পদ।
সিলেট জেলায় সহকারী শিক্ষকের মোট পদের সংখ্যা ৭ হাজার ৫৩২টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ৭ হাজার ১৭৭ জন সহকারী শিক্ষক। এ জেলায় শূন্য পদের সংখ্যা ৩৫৫টি। এরমধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ১২, দক্ষিণ সুরমায় ৫, ফেঞ্চুগঞ্জে ১, বালাগঞ্জে ৫৭, বিশ্বনাথে ১১, ওসমানীনগরে ২৪, জকিগঞ্জে ৭১, কানাইঘাটে ২৭, বিয়ানীবাজারে ৩১, গোলাপগঞ্জে ২১, কোম্পানীগঞ্জে ২৯, গোয়াইনঘাটে ৬৬ এবং জৈন্তাপুর উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের ৬টি পদ শূন্য রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলায় সহকারী শিক্ষকের মোট পদ রয়েছে ৬ হাজার ৭২১ টি। বর্তমানে কর্মরত আছেন ৬ হাজার ৭৮ জন সহকারী শিক্ষক। জেলায় শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা ৬৪৩টি। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৬৮, দোয়ারাবাজারে ৪১, বিশ্বম্ভরপুরে ২৬, ছাতকে ৯০, তাহিরপুরে ৮২, জামালগঞ্জে ৫২, ধর্মপাশায় ৯৪, শাল্লায় ৬৫, দিরাইয়ে ৪৩, জগন্নাথপুরে ৩৬ ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৫৬টি পদ শূন্য রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৫ হাজার ৪টি পদ রয়েছে। এর মাঝে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৪ হাজার ৮১৮ জন শিক্ষক। এই জেলায় শূন্য পদের সংখ্যা ১৮৬ টি। এরমধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ১৮, রাজনগরে ৩২, বড়লেখায় ৩০, জুড়ীতে ২১, কুলাউড়ায় ৪৬, শ্রীমঙ্গলে ১৭ এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় ২২টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলায় সহকারী শিক্ষকের মোট পদের আছে ৫ হাজার ১০৬ টি। এ জেলায় বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৪ হাজার ৯১১ জন। শূন্য পদ রয়েছে ১৯৫টি। এরমধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ১২, নবীগঞ্জে ৪৩, লাখাইয়ে ১৪, বানিয়াচং-এ ১৯, আজমিরীগঞ্জে ২৮, মাধবপুরে ১৬, চুনারুঘাটে ২৭ ও বাহুবল উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের শুন্য পদ রয়েছে ৩৬টি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময় থেকে এ পরীক্ষা শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময় শেষ হবে। বেশী সংখ্যক পরীক্ষার্থীকে নিয়োগের জন্য ৪ ধাপে লিখিত পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য সারাদেশের প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসনবিন্যাসের কাজ চলছে ।
ডিপিই সূত্রে গেছে, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া হবে ৩২ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষক। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়োগ পাবেন ২৫ হাজার ৬৩০ জন। বাকিগুলো শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া হবে। তবে, গত দুই বছর শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত থাকায় শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েছে। এজন্য বাড়ানো হবে শিক্ষক নিয়োগের সংখ্যা। এ জন্য সারাদেশে মোট ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। চলমান এইচএসসি পরীক্ষা আগামী ৩০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার পর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করা হবে। বর্তমানে প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। ৪ টি ধাপে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। সারদেশের প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে আসনবিন্যাস কাজ শুরু করা হয়েছে।
জানা গেছে, পরীক্ষা শুরুর ৫ দিন আগে সেই জেলার প্রার্থী পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাবেন। মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে তাকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে লিংক পাঠানো হবে। সম্প্রতি নিয়োগ কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ডিপিই মহাপরিচালককে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশনা দেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের আরো বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) তৈরির কাজ শেষপর্যায়ে। পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করে প্রার্থীদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ অক্টোবর অনলাইনে আবেদন শুরু করেন প্রার্থীরা। আবেদনপ্রক্রিয়া শেষ হয় গত ২৪ নভেম্বর রাতে। এর পরের ৭২ ঘণ্টা সময় ছিল পেমেন্ট করার জন্য। পেমেন্ট শেষে ১৩ লাখের বেশি প্রার্থী এ পদের জন্য আবেদন করেন। ২০০৯-১৯ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মুজিব বর্ষে সব শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্ভব হয়নি। তবে সে বছরের সেপ্টেম্বরে নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অক্টোবরে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগের পর সেপ্টেম্বরে কোটামুক্ত রেখে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিকের শিক্ষক পদটি ১৩তম গ্রেড হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে মোট উত্তীর্ণ হন ৫৫ হাজার ২৯৫ জন, নিয়োগ দেওয়া হয় ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে। এর আগে একই বছর ২০১৪ সালের স্থগিত পরীক্ষাটিও নেওয়া হয়। ওই পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হন ২৯ হাজার ৫৫৫ প্রার্থী। এর মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয় ৯ হাজার ৭৬৭ জনকে। এ দুই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চূড়ান্ত নির্বাচিত হননি ৫৬ হাজার ৯৩৬ প্রার্থী। উত্তীর্ণ এসব প্রার্থী ২০১০-১১ সালের মতো প্যানেল নিয়োগ চান। তবে মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, প্যানেলে নিয়োগ দেওয়া হবে না। নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, অবসর ও বদলীজনিত কারণে পদ শূণ্য হওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিবছরই কিছু সংখ্যক শিক্ষক এই দুটো প্রক্রিয়ায় আওতায় পড়ে যান। শিক্ষা যাতে ব্যাহত না হয় সে লক্ষ্যে শূণ্য পদ পূরণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে নতুন নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হলে সিলেট বিভাগের ১ হাজার ৩৭৯টি শূণ্যপদ পূরণ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষা চলমান থাকলে পদ শূণ্যতা কমে আসবে।