মরণসাইকেল বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ৮:৪১:২৯ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘মোটর সাইকেল যেনো মরণসাইকেল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার এক ভীতিকর চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিন সিলেট অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। এতে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবার। যারা দুর্ঘটনায় পঙ্গু হচ্ছেন, তারা পরিবারের আর্থিক সংকট দূরীকরণের পরিবর্তে উল্টো বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, হতাহতদের বেশির ভাগই তরুণ। মানসম্মত হেলমেট না থাকায় দুর্ঘটনার পর হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৬ মাসে দেশে ১ হাজার ৪৯৪ টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ৪৭৮টি। এতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৬৬ জন। আহত হয়েছেন ৩০৫ জন। এদের মধ্যে অনেকেরই মাথায় হেলমেট ছিলো না। মোটর সাইকেল ভিকটিমদের বেশির ভাগই তরুণ, যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। দেখা যাচ্ছে, বেপরোয়া চালানোর ফলেই বেশির ভাগ মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে হতাহতের পরিবার। আহত অবস্থায় চিকিৎসা ব্যয় মেটাতেও হিমশিম খেতে হয় পরিবারের সদস্যদের। আর আহতদের ৮০ শতাংশই কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সম্প্রতি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক ছেলে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত হয়। প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলেও অবস্থার অবনতি ঘটলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে প্রেরণ করা হয়। সেখানে এমআরআই রিপোর্টে মাথার ভেতরে গুরুতর জখমের চিহ্ন ধরা পড়ে। পরে তার নিউরো সায়েন্স চিকিৎসায় ব্যয় করতে হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। এরপরেও সে স্বাভাবিক হতে পারেনি। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে ছেলেটি। একইভাবে আরেকজনক তরুণ বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তাকে পাঠানো হয় পঙ্গু হাসপাতালে। ১২ দিনে তার পেছনে ব্যয় হয় ২ লাখ টাকা। এভাবে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় অগনিত মানুষ হতাহত হচ্ছেন, যাদের বেশির ভাগই তরুণ। অথচ এরাই দেশের উৎপাদনক্ষম জনশক্তি, দেশের ভবিষ্যত।
মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় যে শুধু মোটর সাইকেল চালক ও আরোহীরাই হতাহত হচ্ছে এমন নয়। এদের মধ্যে বহু পথচারী রয়েছেন। গত কয়েক মাসে বহু বয়স্ক নারী ও পুরুষ মোটর সাইকেল ধাক্কায় মারা গেছেন। রাস্তাঘাটে মোটর সাইকেলের বেপরোয়া গতিবিধি ভালোভাবে বুঝতে ও তাল মেলাতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষীণ দৃষ্টির অধিকারী বৃদ্ধ পথচারীদের ধাক্কা দেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। বাংলাদেশে হেলমেটের কোন সার্টিফিকেশন কর্তৃপক্ষ নেই। অনেক নিম্নমানের হেলমেট আমদানি করা হচ্ছে, যেগুলো দুর্ঘটনায় মাথাকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হচ্ছে না। সচেতন মহল, এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা ইউএস স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট আমদানি বা দেশে অ্যাসেমব্লিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সর্বোপরি, দেশের ক্রমবর্ধমান মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাইসেন্স ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া মোটর সাইকেল চালানো বন্ধকরণ, আলাদা লেইন তৈরী এবং বেপরোয়া গতিবেগে মোটর সাইকেল চালানো বন্ধে ট্রাফিক বিভাগকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন মোটর সাইকেলের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তায় ধারণ সম্ভব নয়, এমন সংখ্যক মোটর সাইকেল চালানোর অনুমতি দেয়া হয় উচিত নয়। এদিকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে। আশা করি সরকারের উর্ধ্বতন মহল অবিলম্বে সড়ক দুর্ঘটনায় সম্প্রতি নতুনভাবে যুক্ত হওয়া এই সমস্যার দিতে নজর দেবেন।