বেড়েই চলেছে ক্যান্সার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৯:০৪:২৮ অপরাহ্ন
সোমবার দৈনিক জালালাবাদে ‘সিলেটে ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সিলেটে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী। চা শ্রমিকসহ বিভিন্ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আধিক্য, খাদ্যাভ্যাস ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশার কারণে এখানে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া এ অঞ্চলে ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান প্রধান কারণ হলো পান সুপারির সাথে তামাক অর্থাৎ সাদা-পাতা, জর্দা ইত্যাদি সেবন। সিলেট নর্থইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী গত বছর তাদের হাসপাতালের আউটডোরে আসা মোট রোগীর মধ্যে ৩৩.৬ শতাংশ রোগীর মাঝেই বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ১৪ হাজার ৮৭৬ জন ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আর রেডিওথেরাপী চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ১০ জন। ক্যান্সার আক্রান্তদের মাঝে হেড নেক ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও সার্ভিক্স ক্যান্সারের রোগী বেশী।
অপরদিকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে প্রকাশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ওসমানী মেডিক্যালের ক্যান্সার ইউনিটে কেমোথেরাপী চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশী রোগী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিলেটের ১ কোটি মানুষের জন্য রয়েছে বেসরকারীভাবে কেবল নর্থইস্ট ক্যান্সার হাসপাতাল এবং সরকারীভাবে ওসমানী মেডিক্যালের মাত্র ২৬ শয্যার একটি ইউনিট। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, শুধু সিলেট নয়, সারা দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা শংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থার উন্নতি করতে হলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ ও পান সুপারির সাথে তামাক অর্থাৎ সাদা-পাতা ও জর্দার ব্যবহার কমাতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
দেখা যাচ্ছে, শুধু সিলেট নয়, সারা দেশে মারণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষভাবে সাড়ে ১০ কোটি নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আশংকাজনক ব্যাপার হচ্ছে, এই দ্বিতীয় মরণব্যাধিতে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ মারা যায় ক্যান্সারে। এদের অধিকাংশই হচ্ছে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক।
এ অবস্থায় এদেশের ১৮ কোটি মানুষের জনগোষ্ঠীর দেশে সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে মাত্র ১৬টি হাসপাতাল রয়েছে। সিলেটের অবস্থা আরো করুণ। নর্থ-ইস্ট ক্যান্সার হাসপাতাল ছাড়া সিলেটের মানুষের ভরসাস্থল ওসমানী মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার ইউনিটের ২৬টি শয্যা। এতো স্বল্প সংখ্যক শয্যা নিয়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। সরকারীভাবে রেডিও থেরাপীর জন্য ওসমানী মেডিকেলে মাত্র একটি কোবাল্ট-৬০ মেশিন রয়েছে। রেডিওথেরাপী সময়সাপেক্ষ হওয়ায় একজন রোগ[ীকে সিরিয়াল পেতে অন্ততঃ ২ থেকে ৩ মাস সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এখানে একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রায় সবাই একমত যে, তামাক তথা ধূমপান এবং সাদাপাতা ও জর্দা কান্সার ও হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। এ অবস্থায় বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে যখন টোব্যাকো সেবন বিশেষভাবে ধূমপান হ্রাস পাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে ধূমপান বেড়েই চলেছে। তরুণ যুবারা ব্যাপক হারে ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। শহরাঞ্চলের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষের মাঝে ধূমপান হ্রাস পেলেও গ্রামাঞ্চলের অশিক্ষিত লোকজনের মাঝে বিড়ি ও সিগারেট খাওয়া বেশী বেড়েছে।
সিলেট অঞ্চলে পান সুপারির সাথে সাদাপাতা, জর্দা ইত্যাদি খাওয়ার রেওয়াজ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশী। এখানে যেমন সুপারি বেশী উৎপাদিত হয়, তেমনি খাসিয়া পান হিসেবেও পরিচিত জনপ্রিয় পানও প্রচুর জন্মে। ফলে এখানকার জনগণের মাঝে পানসুপারির সাথে টোবাকো গ্রহণের প্রবণতা বেশী। এর ফলে এ অঞ্চলে মুখগহ্বর ও ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকোপ বেশী। সিলেট অঞ্চলের প্রচুর ক্যান্সার রোগীকে প্রতি সপ্তাহে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ মাদ্রাজ ইত্যাদি স্থানে যেতে দেখা যায়। অনেকে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত জমিজমা এমনকি ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় সিলেট অঞ্চলে ক্যান্সারের এ ধরণের আশংকাজনক বৃদ্ধি প্রতিরোধে লোকজনের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আরো অধিক সংখ্যক ক্যান্সার হাসপাতাল এবং ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে। আমরা এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।