আল বিদা মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০২২, ১২:২৫:১১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: আজ রোববার ২৯ রমজান। আজ বা কালকের মধ্যেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। চাঁদ দেখে রোজা রাখা এবং চাঁদ দেখে রোজা ভঙ্গ করার কথা হাদীসে উল্লেখ আছে। তাই রমজানের চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা হয় আর শাওয়ালের চাঁদ দেখে ঈদ করা হয়ে থাকে। কিন্তু মেঘের কারণে চাঁদ দেখা না গেলে রমজান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করার জন্য রাসূল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) ও হযরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে : ‘তোমরা রোজা রাখবে না যতক্ষণ চাঁদ দেখতে পাবে না এবং রোজা ভাঙবে না যতক্ষণ চাঁদ দেখতে পাবে না। (২৯ তারিখ) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সেই মাসের (ত্রিশ) দিন পূর্ণ করে লও।’ তাবেয়ী তাউস বলেছেন : আমি মদীনায় হযরত ইবনে ওমর ও হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁদের নিকট এক ব্যক্তি রমজান মাসের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেয়। তাঁরা দুই জনই তা গ্রহণ করলেন এবং বললেন, ‘রাসূলে করীম (সা.) রমজান মাসে চাঁদ দেখার ব্যাপারে একজনের সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু রোজা খোলার ব্যাপারে দুইজনের সাক্ষ্য ছাড়া রোজা খোলার অনুমতি দিতেন না’ (দারে কুতনী, তিবরানী ফিল আউসাত)। চাঁদ দেখা গেলে দীর্ঘ এক মাসের তাকওয়া অর্জনের ট্রেনিং কোর্স রমজান মাসের রোজা পালনের সামগ্রিক ইবাদতেরও শেষ হবে। উদ্দেশ্য থাকবে বাকি ১১ মাস যেন এই ট্রেনিং-এর আলোকে নিজেদেরকে পরিচালিত করতে পারি। যে তাকওয়ার গুণাবলী আমরা রোযা থেকে অর্জন করেছি বাকি জীবন যেন সে আলোকে পরিচালিত করতে পারি সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
রাসূল (স.) হিজরত করে দেখতে পান মদিনাবাসী বছরে দুটি উৎসব পালন করছে। উৎসব দুটিতে তারা খেলাধুলাসহ তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য লালন করছে। উৎসব দুটির একটির নাম নাইরোজ এবং অপরটির নাম মেহেরজান। নবী (স.) মুসলমানদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামক দুুটি পবিত্র উৎসব প্রবর্তন করেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, মদিনায় নবী (স.) হিজরত করে আসার পর দেখলেন, মদীনাবাসী দুদিন খুব আনন্দ উৎসব করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুদিনে তোমরা কী কর? তারা বললেন, আমরা জাহিলিয়্যাতের যুগে এ দুটো দিন খেলাধুলা, আমোদফুর্তি করতাম। নবী (স.) বললেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের এ দুটো দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি দিন প্রদান করেছেন। তার একটি হলো ঈদুল আযহারর দিন ও অপরটি হলো ঈদুল ফিতরের দিন (সনানু আবী দাউদ, হাদীছ নম্বর-১১৩৬)।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম স্বীয় গ্রন্থে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন : ‘নবী করীম (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদের ময়দানে চলে যেতেন। সর্বপ্রথম তিনি নামায পড়াতেন। নামায পড়ানো শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন। তখন লোকেরা যথারীতি নিজেদের কাতারে বসে থাকতো। এ সময় নবী করীম (সা.) লোকদেরকে ওয়াজ নসীহত করতেন, শরীয়তের আদেশ নিষেধ শোনাতেন। তখন যদি কোন সৈন্যবাহিনীকে কোথাও পাঠাবার ইচ্ছা করতেন তাহলে তা পাঠাতেন এবং কোন বিশেষ বিষয়ে নির্দেশ জারি করার উদ্দেশ্য থাকলে তাও করতেন। অতঃপর তিনি ঈদগাহ হতে প্রত্যাবর্তন করতেন।’ ইবনে মাযাতে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, ‘রাসূলে করীম (সা.) ঈদের নামাযের ময়দানে পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরে আসতেন।’ ঈদুল ফিতরের দিনে সকাল বেলা নামাযের জন্য বের হবার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নত। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেছেন : ‘রাসূলে মাকবুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হবার পূর্বে আহার করতেন।’ সহীহ আল বুখারীতে হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন, ‘নবী করীম (সা.) ঈদের দিনে ময়দানে যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন।’ অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে আসতেন না। ফিরে আসতেন অন্য পথ দিয়ে।
বৃষ্টির কারণে মসজিদে ঈদের নামায পড়া জায়েয আছে। হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদের দিনে বৃষ্টি হল, তখন রাসুল (স.) তাদেরকে নিয়ে মসজিদে ঈদের নামায পড়লেন। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৬২)। এতে বুঝা যায়, বৃষ্টি বা অন্য কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে ঈদের নামায মসজিদে পড়া জায়েয।
ঈদের দিনে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা রাসূল (সা.) এর আমল হতে প্রমাণিত। তাবারানীতে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঈদ সমূহকে তাকবীর বলার সাহায্যে সুন্দর আনন্দমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ করে তোল।’ ইমাম যুহরী বলেছেন ‘নবী করীম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে ঘর হতে বের হয়ে নামাযের স্থানে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর বলতে থাকতেন।’