বাড়ছে পানি, ডুবছে নিম্নাঞ্চল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০২২, ৪:১০:০৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :
টানা বৃষ্টি ও ঢলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে আরো নতুন নতুন এলাকা। শনিবার পর্যন্ত সিলেট জেলার ৫ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়ছে নদনদীর পানিও। এরই মধ্যে সুরমা নদীর পানি দুটি পয়েন্টে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। সিলেট ছাড়াও হাওরপারের জেলা সুনামগঞ্জেও ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেট-সুনমাগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইনসহ সব নদীর পানি বাড়ছে। অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট এবং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। এসব গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। এখানকার ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে। একই অবস্থা গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ এবং কানাইঘাট উপজেলারও। এছাড়া সুনামগঞ্জেরও বিভিন্ন উপজেলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী জানান, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদেতেও বিপদদসীমার ওপরে বইছে। এছাড়া সারি ও গোয়াইন নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে ১৮ মে পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলা বৃষ্টি বেশি হবে। তিনি বলেন, শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১২৮ মিলিমিটার ও শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে উজান থেকে নেমে আসা ঢল। ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, সিলেটের পানিবন্দি মানুষের জন্য ৭৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলায় এসব চাল বিতরণ করা হবে। তিন জানান, এসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জৈন্তাপুরে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার : জৈন্তাপুর প্রতিনিধি জানান, জৈন্তাপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯ ঘন্টা পর নৌকাডুবে নিখোঁজ পাথর শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। বিভিন্ন গ্রামের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে হুমকীর মুখে বিভিন্ন এলাকার বসতবাড়ী।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট এবং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। বেশিরভাগ রাস্তা পানির নিচে থাকায় বিভিন্ন গ্রামসহ উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বড়গাং এবং সারী নদীর পানি বিপদসীমা অতিত্রæম করেছিল। তবে শনিবার সকাল থেকে নদীর পানি কিছুটা কমতে দেখা গেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার অনেকটা নিচে রয়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা রয়েছে। শুত্রæবার সকাল ১০টায় উপজেলার ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মুক্তাপুর গ্রামের পাথর শ্রমিক আলমগীর হোসেন’র মৃতদেহ দীর্ঘ ২০ ঘন্টা পর শনিবার ভোর ৬টায় পানিতে ভেসে উঠে। গ্রামের লোকজন আলমগীরের মরদেহ উদ্ধার করে এবং আসরের নামাজের পর স্থানীয় দর্জিহাটি ইদগাহ মাঠে জানাযা শেষে দাফন করা হয়।
এদিকে, নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক পরিবারের মানুষ এখনো পানিবন্দি। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়াতে শ্রমিক ও নি¤œআয়ের মানুষ রয়েছেন বিপাকে। এছাড়া কৃষি প্রধান পরিবার ও খামারিরা গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে পড়েছেন চরম সংকটে। পানিবন্দি মানুষের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়ে ১৬ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং সংকটপূর্ণ মুহুর্তের জন্য আরো ১২ মেঃ টন চাল ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ বশির উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়ার তথ্য মতে নদ-নদীর পানি এখন বিপদসীমার নিচে রয়েছে। তারপরও আমরা সার্বক্ষনিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি। পানিবন্দি অসহায় মানুষের জন্য যথেষ্ট ত্রাণ বরাদ্দ রয়েছে, কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকূল থাকার কারণে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বারহালে ডাইক ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত : জকিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অবিরাম বর্ষণ ও বারিপাতের ফলে জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সুরমা ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ায় অনেক বাড়িঘর ও বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বারহাল ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের নোয়াগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম, বারাকুলি চক, শরিফাবাদ ও কচুয়া এলাকায় সুরমা ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রবল বেগে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে ও ১ হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের প্রায় বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।
কানাইঘাটে ডুবছে বাড়িঘর রাস্তাঘাট, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন : কানাইঘাট প্রতিনিধি জানান, টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ডুবেছে বাড়িঘর, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে লোভা-সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকে। সুরমা নদীর প্রবল ঢলে উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরঘড়ি সুরমা ডাইকে ভয়াবহ ভাঙ্গনসহ সুরমা ডাইকের বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে উপজেলার ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম, ৫নং বড়চতুল, ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, ৪নং সাতবাঁক, ৬নং কানাইঘাট সদর, ৩নং দিঘীরপাড় পূর্ব ও ৭নং দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকা, রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারণে হাজার হাজার বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
কানাইঘাট বাজার কোমর পানি থেকে হাঁটু পানি বিরাজ করায় বাজারের অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়ক, কানাইঘাট-গাছবাড়ী গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সাথে সব ধরনের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। কানাইঘাট সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪২ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেওয়ায় শত শত হেক্টর বোরো ধানের মাঠ তলিয়ে গেছে। আমন ধানের বীজতলা বিনষ্ট হয়েছে। শত শত মৎস্য খামার, ফিশারি-পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। শত শত গ্রামীণ রাস্তাঘাট কোমর পানি থেকে গলা পানি বিরাজ করায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিংসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিদর্শন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সুরমা ডাইকের বিভিন্ন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বিশেষ করে কুওরঘড়ি সুরমা ডাইকের ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ শুরু করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকারিভাবে বন্যা কবলিত এলাকার জন্য ১৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। আজ থেকে তা বিতরণের প্রস্তুতি নেয়া হবে এবং শুকনো খাবারের চাহিদা জানানো হয়েছে।
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আফসর উদ্দিন চৌধুরী ও লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান মাও. জামাল উদ্দিন তাদের ইউনিয়নের বন্যা কবলিত প্রত্যেকটি এলাকা পরিদর্শন করে হাজার হাজার পানিবন্দি মানুষজনকে দ্রæত ত্রাণ সামগ্রী ও শুকনো খাবার বিতরণের দাবী জানান এবং সরকারিভাবে আরো বরাদ্দ দেওয়ার আহŸান করেন। পানিবন্দী হয়ে পড়া অনেকে উপজেলার বিভিন্ন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নিম্নাঞ্চল। এক মাসের ব্যবধানে আবারো বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় নাজেহাল উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। উপজেলা সুত্রে জানা গেছে ২/১ দিনের মধ্যে বন্যার্তদের মধ্যে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
গত ৩ দিন থেকে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে উপজেলা উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন, ইসলামপুর প‚র্ব এবং পশ্চিম ইউনিয়ন, তেলিখাল ইউনিয়ন ও ইছাকলস ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ফসলি জমি। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়া লোকজন সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন। এক মাসের ব্যবধানে আবারো বন্যার কবলে পড়ায় দিশেহারা এসব মানুষ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কান্তি জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় ২/১ দিনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। ১৩ মে ১২ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা জমা দিলে প্রতিটি ইউনিয়নে ২ মেট্রিকটন করে চাউল বিতরণ করা হবে।
গোয়াইনঘাটে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি জানান, গোয়াইনঘাটে পাহাড়ী ঢলে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। পরিস্থিতি রয়েছে অপরিবর্তিত। রাতে কিছুটা পানি কমলেও বর্যণ অব্যাহত রয়েছে। কাটা ধান অনেক ভেসে গেছে। ঘরে থাকা ধান নষ্ট হচ্ছে। শ্রমজীবীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, জিআর ২৪ মেঃটন চাল এসেছে। বন্যা পরিস্থিতিতে সার্বিক নজর রাখা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। কোথাও ঘরবাড়িতে পানি উঠলে লোকজনদের নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
সুনামগঞ্জে নদীর পানি বাড়ছে, তীব্র হচ্ছে সংকট : সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বাড়ছে। নিচু এলাকায় ছোট ছোট খালগুলো পানিতে পরিপূর্ণ। সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই কুশিয়ারা পাটলাইসহ সকল নদনদীর পানি বেড়েছে। পানি বাড়তে থাকায় কোথাও কোথাও ফসল তলিয়ে গেছে। টানা ৭ দিনের বৃষ্টিতে ভিজে ধান নষ্ট হচ্ছে। গো-খাদ্যের সংকট তীব্র হচ্ছে।
হাওর ঘুরে খবর নিয়ে জানা গেছে, সদর ও বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওরের উঁচু এলাকার ২৬ গ্রামের কৃষকের পাকা ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার বিকালে গজারিয়া রাবারড্যামের পাশের সড়ক ভেঙে পানি ঢুকে ফসল তলানো শুরু হয়। এ সময় রাবারড্যামের পাশের ছয়টি বাড়িও ঢলে ভেসে গেছে। এদিকে, দোয়ারাবাজারে ঢলের পানিতে বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। উপজেলার সীমান্তবর্তী বাংলাবাজার, লক্ষীপুর, বগুলা, নরসিংপুর, সুরমা, দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও, মান্নারগাঁও ও দোয়ারা সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তা, মাঠঘাট, আউশ জমিতেও পানি ঢুকছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে মাঠের অবশিষ্ট বোরো ফসল ও রবিশস্য উৎপাদন অনিশ্চয়তায় পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহরুল ইসলাম জানান, উজানে বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা নদনদীর পানি আরও বাড়তে পারে। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এক একর জমির ধানও যাতে কারো অবহেলায় পানির নীচে না যায় সেটি খেয়াল রাখার জন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমলগঞ্জে ৫শ’ হেক্টর বোরো ধান নিমজ্জিত : কমলগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দু’দিনের ভারী বর্ষণে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢল নেমে কেওলার হাওরসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। কাটার বাকি থাকা প্রায় ৫শ’ হেক্টর বোরো ধান ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আরও পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে সেচ সংকট, খরা, অনাবৃষ্টি, পোকার আক্রমণসহ নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত শুক্রবার ও শনিবার দু’দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ কেওলার হাওর তলিয়ে গেছে। ঢল ও জলাবদ্ধতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫শ’ হেক্টর পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে এবং আরও প্রায় ৫শ’ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। আলীনগর, শমশেরনগর, রহিমপুর, মুন্সিবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়নে বোরো ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিক নিয়ে কৃষকেরা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব এলাকার নিচু জমিতে আবাদী বোরো ধান তলিয়ে গেছে। উপজেলার পতনঊষারের কেওলার হাওর এলাকার ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে আশপাশ এলাকার কিছু ধান নিমজ্জিত ও আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। হাওর এলাকার দু’টি বাড়ি জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কমলগঞ্জে ৪ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে কৃষকদের আগ্রহে এ বছর এর মধ্যে ২শ’ ১০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আগামী দু’চার দিনের মধ্যে কৃষকরা শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে বোরো ধানের কিছুটা এলাকা আংশিক নিমজ্জিত হলেও দ্রæত পানি নেমে যাচ্ছে। কৃষকরাও ধান কেটে ঘরে তুলে নিচ্ছেন। বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।
ডুবলো করচার হাওরের ধান : ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের করচার হাওরের উঁচু এলাকার পাকা ধান ডুবে গেছে। বানের তোড়ে ভেসে গেছে ১৫টি বসতবাড়ি। শুক্রবার বিকেলে গজারিয়া রাবারড্যামের পাশের সড়কের দুটি অংশ ভেঙে এ বিপর্যয় দেখা দেয়।
শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদি-উর-রহিম জাদিদ বসতভিটা হারানো পরিবারসহ ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের কৃষকের প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি রয়েছে করচার হাওরে। হাওরের প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগেই। কিন্তু উঁচু এলাকার জমির ধান এখনো রয়েই গেছে।
এসব জমিতে বিআর ২৯ জাতের ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। ফলনও ভালো ছিল। কিন্তু বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা এবং চলতি নদীর পানি বাড়ায় গজারিয়া রাবারড্যামের পাশের সড়কের দুটি অংশ ভেঙে পানিতে ভাদেরটেক গ্রামের আব্দুস ছাত্তার, আবুল হোসেন, ফয়জুর রহমান, আলম মিয়া, দয়াল মিয়া, তৈয়বুর মিয়া, মোহন মিয়া, শওকত আলী. মতি মিয়া, মঞ্জুর আলী, নুরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, মুজারা খাতুন, জরিনা খাতুন ও হিবজুর রহমানের বসতভিটা ভেসে গেছে।