বন্যার উন্নতি, তবুও শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মে ২০২২, ৩:১৫:২১ অপরাহ্ন
সিলেট-সুনামগঞ্জের নদী বিপদসীমার নিচে
পানি ধীরে নামায় বেড়েছে দুর্ভোগ
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের প্রায় সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সিলেটের ১৩ উপজেলার বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে বন্যার উন্নতি হলেও নিম্নাঞ্চলে এখনো শত শত গ্রামের মানুষ পানির সাথে লড়াই করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া অধিকাংশ বাড়ি চলে গেলেও ভরা বর্ষায় ফের বন্যার শঙ্কা তাদের। অন্যদিকে, সুনামগঞ্জে গত ৬ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি ধীরে নামায় বেড়েছে দুর্ভোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে সুরমা নদীর পানি গতকাল বৃহস্পতিবার দুটি পয়েন্টেই বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টে সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপষসীমার শূন্য দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে, সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছিল ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র। সেগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। পানি নেমে যাওয়ায় ইতিমধ্যে সেসব আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। তবে বাড়ি ফিরলেও ফের বন্যার শঙ্কায় তারা। কারণ সামনে ভরা বর্ষা মৌসুম। ফের বন্যা হলে কোথায় যাবেন তাঁরা?
বৃহস্পতিবার সকালে নগরের মিরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়টি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছিলেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। ৪ তলার ভবনটিতে প্রায় সাড়ে ৪শ’ আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন।
কিশোরী মোহনের মতো অন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও মানুষ নেই বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শাহজালাল উপশহর, তেররতন, যতরপুর, তালতলা, জামতলা, সোনাপাড়া এলাকায় গিয়ে কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। তবে প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার সড়কগুলো থেকে পানি নেমে যাওয়ার পরও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা এবং কাদাপানি রয়ে গেছে। এছাড়া বন্যার পানিতে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনাও দেখা গেছে কোন কোন এলাকায়।
এদিকে, সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়া এবং চারদিকে পানি থাকায় ঝুঁকির কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারেনি। অনেক অভিভাবকই শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাননি। যে কারণে প্লাবিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান বন্ধ ছিল। এখন বন্যার পানি কমেছে। তাই শিক্ষার্থীরা আবার স্কুলে যেতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা।
এদিকে, সুনামগঞ্জে গত ৬ দিন ভারী বৃষ্টি হয়নি। একই সময়ে উজানের পাহাড়ি ঢল নেমেছে কম। যে কারণে সার্বিক বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জেলার নদী ও হাওরে পানি কমেছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে পানি ধীরে কমছে বলে জানান সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রীতম পাল।
পানি ধীরে নামায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। অনেক এলাকা এখনো জলাবদ্ধ হয়ে আছে। পানিতে কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। এই পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করায় দেখা দিচ্ছে নানা রোগবালাই। আবার পানি নামার পরও ঘরের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও মেঝেতে কাদামাটি জমে থাকায় মানুষ সহজে ঘরে ফিরতে পারছেন না।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ৩৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। এখন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায়। এই দুই উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত ছিল বেশি। বন্যায় জেলার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।