ছাতকে লাখো মানুষের দুর্ভোগ একটি কালভার্ট
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২২, ৬:৩৪:৩৫ অপরাহ্ন
আমিনুল ইসলাম হিরন, ছাতক: সুনামগঞ্জের ছাতকে একটি ভাঙ্গা কালভার্টের কারণে লাখো মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পুরাতন কালভার্ট ভেঙ্গে নতুন কালভার্ট তৈরি করতে ইতোমধ্যে প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চরম অবহেলার ফলে লাখো মানুষের দুর্ভোগ আরো দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর-লামা রসুলগঞ্জ আবুল খয়ের সড়কের প্রবেশমুখে দুই বছর আগে জালালপুর-দোলারবাজার পর্যন্ত আরসিসিসহ প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ পায় মেসার্স আকবর আলী কনট্রাকশন নামের দোয়ারাবাজারের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ কাজের সাথে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের কাছে রতœা নদীর (বর্তমান খাল) উপর পুরাতন কালভার্ট ভেঙ্গে নতুন কালভার্ট তৈরির ব্যয় যুক্ত করা হয়। এ সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে পুরাতন কালভার্ট ভাঙ্গা শুরু হয়। যান চলাচলের বিকল্প রাস্তা তৈরি না করে নিজেদের খেয়াল খুশিতে কালভার্ট ভাঙ্গা শুরু করলে স্থানীয় সচেতন মহল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এতে তিন দিন কালভার্ট ভাঙ্গা বন্ধ ছিল। তখন ওই কালভার্টের উপর বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে মানুষজন ও ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করেছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষিদের সাথে আঁতাত করে টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাতের আধাঁরে কালভার্টের উপরের অংশ ভেঙ্গে ফেলে। যে কারণে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দক্ষিণ ছাতকের লাখো মানুষ রতœা নদী (বর্তমান খাল) পায়ে হেঁটে পার হয়ে গন্তব্যে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এখন ওই খালে পানি। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্কুল কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সুস্থ অসুস্থসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষকে।
এদিকে, দুই মাসের মধ্যে নতুন কালভার্ট তৈরি করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কালভার্ট ভাঙ্গতে সময় নিয়েছে তিন মাস। নতুন কালভার্টের কাজ ধীরগতিতে শুরু হলে স¤প্রতি উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টির ফলে দেখা দেয় এখানে বন্যা। এ সুযোগে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ বন্ধ করে চলে যায়। বর্তমানে রতœা নদীর পানি কমতে শুরু হলেও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নেই। এ নির্মাণাধীন কালভার্টের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ উপজেলা এবং জেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের মানুষ।
কয়েক মাস ধরে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে যখন কোন জনপ্রতিনিধি উদ্যোগ নেননি ঠিক তখনি স্থানীয় সিএনজি চালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা এগিয়ে আসে। তারা নিজেদের পকেটের টাকায় বাঁশ, কাঠ, গাছ দিয়ে তৈরি করেছে অস্থায়ী বিকল্প ব্রিজ। সামান্য টাকার বিনিময়ে পারাপার করছে ছোট ছোট যানবাহন। সাথে পারাপার হচ্ছেন মানুষ।
স্থানীয় হাইলকেয়ারী গ্রামের প্রতিবন্ধী আবদুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি কালভার্টের কারণে দীর্ঘদিন ধরে লাখো মানুষ যে কষ্ট করছে স্থানীয় এমপিসহ কোন জনপ্রতিনিধিরা দেখেও এগিয়ে আসছেন না।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী নুরুল আমীন বলেন, জালালপুর থেকে দোলারবাজার পর্যন্ত আরসিসিসহ সড়কের সংস্কার কাজ তিনি করেছেন। এর সাথেই যুক্ত ছিল রতœা নদীর উপর পুরাতনটি ভেঙ্গে নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা। শ্রমিক সঙ্কটে পুরাতন কালভার্ট ভাঙ্গতে সময় লেগেছে। নতুন কালভার্টের কাজ শুরু হওয়ার পর বন্যার পানি এসে যায়। কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। পানি কমার পর দ্রæত সময়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। বিকল্প রাস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, কালভার্টের কাজের সাথে এটি ধরা নেই। যে কারণে বিকল্প রাস্তা করা হয়নি।
ছাতক উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আফসার আহমদ বলেন, বন্যার পানির কারণে এখানের কালভার্ট নির্মাণ কাজে বিলম্ব হচ্ছে। স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলের জন্য ঠিকাদারের সাথে আলোচনা করে দ্রæত সময়ের মধ্যে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা হবে।