ভরা মৌসুমেও অস্থির চালের বাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২২, ২:৪৪:৩৫ অপরাহ্ন
অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে মাঠে মন্ত্রণালয়ের ৮ টিম
জালালাবাদ রিপোর্ট : প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম! তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম ৩ দশমিক ৯২ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- অটো রাইস মিল মালিকরা চাল মজুত করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের সরবরাহ নেই। আগের অর্ডারের চালও ঠিকঠাক মতো পাচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে, মিল মালিকরা বলছেন, মিল পর্যায়ে নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়নি। উৎপাদন কম, ধানের দাম বাড়া, টানা বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে চালের দাম বাড়ছে।
দেশে এখন চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এসময় চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। ভরা মৌসুম হলেও সিলেটসহ দেশের বাজারে প্রতিদিন দু-একটাকা বাড়ছে চালের দাম। একই অবস্থা গ্রামগঞ্জের বাজারেও।
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায়। ভালো মানের সরু (নাজিরশাইল ও জিরাশাইল) চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়।
টিসিবির সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ড্যাম) হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একই সময়ের ব্যবধানে (গত এক সপ্তাহে) সব ধরনের চালের দাম কেজিতে গড়ে ৭ টাকা বেড়েছে। এরমধ্যে সরু চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
এক চাল বিক্রেতা বলেন, চালের সংকটের কথা চিন্তা করে সবাই স্টক (মজুত) করেছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রি করবে। ভরা মৌসুমে এত সংকট কখনো হয়নি। যদিও মিল মালিকরা বলছেন, মিল পর্যায়ে নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়নি। উৎপাদন কম ও ধানের দাম বাড়ায়, টানা বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে চালের দাম বাড়ছে।
বাজার ঘুরে জানা যায়- সরু চালের দাম তিনদিনের ব্যবধানে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। ভালো মানের মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, মাঝারি মানের বিভিন্ন সরু চালগুলো ৫২ থেকে ৫৭ টাকা ও মোটা চাল ৪৯ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালকল মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ধানের উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীদের ধান কেনার প্রতিযোগিতা চলছে। বেশি দামে ধান কেনা হচ্ছে। মজুতপ্রবণতাও রয়েছে এবছর।
মন্ত্রণালয় বলছে, হাওরে বন্যা, সারাদেশের অতিবৃষ্টি, ঝড়, পাহাড়ি ঢলে ১৯ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে মোট ৭৯ হাজার ৬২৯ টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমির ৭২ হাজার ১৫৭ টন ধানের। পাহাড়ি ঢলে ১ হাজার ৬৮১ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ১৯৪ টন ধান নষ্ট হয়েছে। এছাড়া অতিবৃষ্টি ও ঝড়ো আবহাওয়ার কারণে ৬৫ হেক্টরে ২৭৮ টন ধানের ফলন কমেছে।
এদিকে, ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখে প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রিসভায়ও। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর কেউ চাল মজুত করে বাজার অস্থির করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রীসভার নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশব্যাপী ধান ও চালের অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থেকে মাঠে নেমেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৮টি টিম। একইসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অবৈধ মজুতের তথ্য জানাতে কন্ট্রোল রুমের +৮৮০২২২৩৩৮০২১১৩, ০১৭৯০-৪৯৯৯৪২ এবং ০১৭১৩-০০৩৫০৬ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।