প্রতীক, না আঞ্চলিকতা! নৌকার কাঁটা বিদ্রোহীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২২, ৯:০৪:১৯ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
আগামী ১৫ই জুন অনুষ্ঠিত হবে বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে মোট ১০ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগেরই ৪ জন। এছাড়া জাতীয় পার্টির ও কমিউনিস্ট পার্টি একক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা । বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছেন মেয়র, কাউন্সিলার হতে আগ্রহীরা। ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীরা নানা কৌশলে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোট চাইছেন নিজের পক্ষে, দলের পক্ষে। সমান তালে চলছে মিটিং-মিছিল ও উঠান বৈঠক। নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে কৌশলী কাঁদা ছুড়াছুড়ি করছেন। তবে এ নির্বাচনে বেকার যুবকদের কদর বেড়েছে। এর মধ্যে অনেকে ভোটারও না।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক প্রার্থী গোপনে আঞ্চলিকতার বিষয়টি নিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে, তবে প্রকাশ্যে তা কেউ স্বীকার করতে রাজি নন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকার শ্রীধরা-নবাং অঞ্চল থেকে হেলমেট প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস টিটু। কসবা-খাসা গ্রাম থেকে চামচ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. ফারুকুল হক। ফতেহপুর, নয়াগ্রাম, দাসগ্রাম, লাসাইতলা, খাসাড়ীপাড়া অঞ্চল থেকে জগ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক পৌর প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন, সুপাতলা-নিদনপুর এলাকা থেকে হেঙ্গার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রভাষক আব্দুস সামাদ ও কম্পিউটার প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহবাব হোসেন সাজু এবং নবাং এলাকা থেকে মোবাইল প্রতীকে মো. আব্দুস সবুর। এছাড়া আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র সম্পাদক আব্দুস শুক্কুর, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে সুনাম উদ্দিন, কমিউনিস্ট পার্টির কাস্তে প্রতীক নিয়ে মো. আবুল কাশেম ও নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: অজি উদ্দিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন সাবেক পৌর প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জগ প্রতীকের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি উঠান বৈঠকও করেছেন। গেল বার মতো এবারও তফজ্জুলের সাথে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুস শুক্কুরের হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।
নৌকার কাঁটা বিদ্রোহীরা : পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগেরই চারজন। বর্তমান মেয়র আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী আব্দুশ শুক্কুর ছাড়াও আরো তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস টিটু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. ফারুকুল হক ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহবাব হোসেন সাজু। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এই ৩ মেয়র প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রোববার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে বহিষ্কারেও পিছু হটছেন না এই তিন বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী। বহিষ্কৃত নেতা ও পৌরসভার মেয়র প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস টিটু জানিয়েছেন, এক সময় বিয়ানীবাজার পৌরসভারকে প্রশাসক দিয়ে অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল। তখন উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলা করে তিনি নির্বাচনের প্ল্যাটফরম তৈরি করেন। এতোসব অবদান থাকার পরও দল তাকে প্রথমবার মনোনয়ন না দিলেও আশ্বস্ত করে বলেছিল পরবর্তীতে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এবারো তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। জনগণের সমর্থন নিয়ে এবার প্রার্থী হয়েছেন জানিয়ে টিটু বলেন, বিয়ানীবাজারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গড়তে তার পক্ষে জনগণের সমর্থন থাকায় তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ফারুকুল হক বলেন, আমি নৌকার বিরুদ্ধে নই। কারণ আমি দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আশা করছিলাম দল আমাকে মূল্যায়ন করেব এবং পৌরবাসীর সেবা করা সুযোগ দেবে। কিন্তু দেয়নি, তা পৌরবাসীর অনুরোধে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।
নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র আব্দুশ শুক্কুর বলেন, দল আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু মাঠে আরো দুইজন বিতর্কিত ব্যক্তি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করা মানে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। তাই ইতোমধ্যে দল এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।