সিলেটে কমছে পানি : বাড়ছে সুনামগঞ্জে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুন ২০২২, ১১:৩১:০৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : টানা ৪ দিন অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির পর অবশেষে উল্টো মোড় নিয়েছে সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি। কমছে অন্যান্য নদীর পানিও। এদিকে সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারায় পানি কমলেও বাড়ছে সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে বাড়ছে সুরমা নদীর পানি। সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন তথ্য জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট।
পাউবো’র তথ্যমতে, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার কমেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় এ পয়েন্টে পানি ছিল ১৩.০৯ মিটার; বুধবার দুপুর ১২টায় হয়েছে ১২.৬২ মিটার। সিলেট পয়েন্টে এ নদীর পানি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছিল ১০.৩৭ মিটার; বুধবার দুপুরে হয় ১০.২৫ মিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৪.৩৮ মিটার। বুধবার সকাল ৯টায় পানিসীমা দাঁড়িয়েছে ১৪.১১ মিটার। এ নদীর পানি কমেছে শেওলা পয়েন্টেও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানি ১২.১৫ মিটারে থাকলেও বুধবার দুপুরে হয়েছে ১১.৯৫ মিটার। শেরপুর পয়েন্টেও কমছে কুশিয়ারার পানি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৭.৭১ মিটার ছিল পানিসীমা; বুধবার হয়েছে ৭.৭০ মিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি কমেছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও। মঙ্গলবার পানিসীমা ছিল ৯.৮২ মিটার; বুধবার দুপুরে হয় ৯.৮০ মিটার। গোয়াইনঘাট দিয়ে বয়ে যাওয়া সারি নদীর পানিও কমছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানিসীমা ১১.১৮ মিটারে থাকলেও বুধবার দুপুরে হয় ১০.৮০ মিটার এদিকে, কানাইঘাট দিয়ে বয়ে যাওয়া লোভা নদীর পানি বেশ কিছুটা কমেছে। এ নদীতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় পানিসীমা ছিল ১৩.৪৪ মিটার। বুধবার দুপুর ১২টায় হয় ১২.৯০ মিটার।
সিলেটের নদ-নদীর পানি কমতে থাকলেও বিপরীতমূখী অবস্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে ৮.৫৪ মিটার থাকলেও বুধবার দুপুরে সেখানে ৮.৬২ মিটার হয়েছে। এখানে পানি বেড়েছে প্রায় ৮ সেন্টিমিটার। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ সদর পয়েন্টে না কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে। এখানে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানিসীমা ৭.৩৬ মিটার ছিল, বুধবার দুপুরেও সেই ৭.৩৬ মিটারে অবস্থান করছে। সব মিলিয়ে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি থাকলেও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস. এম শহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি প্রায় সবকটি পয়েন্টে কমছে। শুধু বাড়ছে সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে। সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশী থাকায় পানি কমছে ধীরে।
আবহাওয়া অফিস সিলেটের তথ্যমতে, গেল ২৪ ঘন্টায় সিলেটে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও বুধবার সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩১ মিলিমিটার। এছাড়া চলতি জুন মাসের ৭ দিনে সিলেটে রেকর্ড পরিমাণ ৪৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনে রাতে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। তবে শুক্রবার থেকে দিনের বেলা বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর শনিবারও কম হবে বৃষ্টি। তবে ফের ১৪ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সিলেটে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এই সময়ে ভারত সীমান্তের পাহাড়ী এলাকায় বেশী পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলেও ফের সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেটে বৃৃহস্পতিবারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লেও শুক্রবার থেকে কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। এরপর ১৪ জুন থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকবে। বছরে জুনমাসে সিলেটে সাধারণত ৮১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে চলতি জুন মাসের ৮ দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৪৬ মিলিমিটার। যা জুন মাসের মোট বৃষ্টিপাতের ৫৫ শতাংশের বেশী। সেই থেকে ধারণা করা যায় চলতি জুন মাসে বৃষ্টিপাতের অন্যান্য বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে বেশী বৃষ্টিপাত হতে পারে।