ছাতকে আবারো বন্যা পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২২, ৮:১০:০৩ অপরাহ্ন
ছাতক প্রতিনিধি:
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতকের সর্র্বত্রই বন্যা দেখা দিয়েছে। ১ মাসের ব্যবধানে আবারো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও হাটবাজার। উপজেলার সর্বত্রই এখন বন্যার পানি থৈ-থৈ করছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত এখানে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সকল নদনদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ও নদনদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ধারণা ছাতকে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ইতিমধ্যে উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলা সদরের সাথে ১৩ টি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের অদুরে রহমতবাগ এলাকায় তলিয়ে গেছে ছাতক-সিলেট সড়ক। দুপুর থেকে সিলেটসহ সারা দেশের সাথে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
শহরের অলিগলি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ভরপুর হয়ে পড়েছে। ছাতক-দোয়ারা সড়ক আমবাড়ি, জাউয়া, নোয়ারাই-বালিউরা, নরশিংপুর, চৌমুহনীবাজার, কৈতক-হায়দরপুর, জালালপুর-লামা রসুলগঞ্জ, জাউয়া-বড়কাপন মুক্তিরগাও, লাকেশ্বর বাজার, বুরাইয়া, দোলারবাজার, কান্দিগাও, হাদা, মাদ্রাসা বাজারসড়কসহ গ্রামীণ সব ক’টি সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। গ্রামীণ হাটবাজার ছাড়াও ছাতক শহর, নোয়ারাই বাজার, ফকিরটিলা, পেপার মিল, কুমনা, মুক্তিরগাও, রহমতবাগ, মন্ডলীভোগ, ছোরাব নগর, চরেরবন্দ এলাকার শতশত বাসা-অফিস ও দোকানে বন্যার পানি ঢুকেছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ, দোলারবাজার, ধারণবাজার, জাউয়াবাজার, আলীগঞ্জ বাজার, পীরপুর বাজার, কপলাবাজার, বুরাইয়াবাজার, জাহিদপুর বাজার, কামারগাঁও বাজার, হাজীর বাজার, মাদ্রাসা বাজার, হাদা বাজার, লক্ষীবাউর বাজার, হাসনাবাদ বাজার, কালারুকা বাজার, আমেরতল বাজারসহ সকল গ্রামীণ হাট। উজানের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শহরের সকল চুনশিল্প কারখানা, ক্রাশার মিল বন্ধ। সুরমা নদীতে নৌকা-কার্গো লোডিং আন লোডিংও বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে শত-শত শ্রমিক এখানে বেকার।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচনী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের দেয়া তথ্যমতে বুধবার (১৫ জুন) সকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশনে ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত। পানিবন্দি হয়ে পড়া মানুষের জন্য ত্রাণ ও ইউনিয়নে-ইউনিয়নে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলার জন্য দাবী করেছেন উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ।
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেল জানান, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ইউনিয়নের বেশ কয়েক টি কাচা ঘরবাড়ি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। তার ইউনিয়নের সকল মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর এলাকায় ও অফিসে বন্যার পানি। পরিষদের অধিকাংশ বাসায়ও পানি ঢুকে গেছে। ছাতক পেপার মিল হাই স্কুল, বৌলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মন্ডলীভোগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬০ পরিবার ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রয়োজনে আরো আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে।