ভয়াবহ বিপর্যয়ে কোম্পানীগঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২২, ৮:২০:৫৪ অপরাহ্ন
আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এমন ভয়াবহ বন্যা আর দেখা দেয়নি। হাওর থেকে ডাঙা, নিচু থেকে উঁচু কোথাও যেন ঠাঁই নেই। প্রায় শতভাগ ডুবে যাওয়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বন্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত। বাড়িঘর আসবাবপত্র গবাদিপশু ফেলে রেখে জীবন নিয়ে কোনমতে মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। সরকার নির্ধানিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সংকুলান না হওয়ায় উঁচু বিল্ডিং, হোটেল, মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ এমনকি রাস্তাতেও আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। সর্বহারা এসব মানুষ খাদ্যের অভাবে দুর্বিষহ দিন পার করছে। গরীব থেকে ধনী সকলেই বন্যায় বিপর্যস্ত। কেউ কাউকে সহযোগিতা করার সুযোগ নেই।
টানা ৩ দিন সড়ক পথে সিলেট শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ৫ দিন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, নেই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও। সব মিলিয়ে এক বিপর্যস্ত উপজেলায় পরিনত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ।
গত ৫ দিন থেকে শুরু হওয়া এই বন্যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রায় শতভাগ মানুষ বন্যা কবলিত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। বাড়ির ছাদ ও উঁচু জায়গায় আটকে পড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব মানুষকে উদ্ধারে আশার আলো সঞ্চার হয় সেনা মোতায়নে। কিন্তু শুক্রবার দুপুরের পর সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও শনিবার বিকেলে তারা কোম্পানীগঞ্জে পৌঁছায়। তবে এর মধ্যে সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের এডিশনাল এসপি লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে শনিবার সকাল থেকে একদল পুলিশ বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করেন। উপজেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বন্যা কবলিত এসব মানুষদের উদ্ধারে কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। প্রয়োজনীয় মুহ‚র্তে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় হতাশ বানভাসী মানুষ।
বন্যার পানিতে ভাসতে থাকা এসব মানুষ কোনমতে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে পারলেও নেই তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা। আশ্রয় কেন্দ্রে শনিবার পর্যন্ত সরকারি কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌছায়নি। উপজেলার ইউএনও, ওসি কিংবা জনপ্রতিনিধি কাউকে আশ্রয় কেন্দ্রে সহায়তা নিয়ে আসতে দেখা যায়নি। ফলে বেঁচে থাকার জন্য একটু খাবারের আর্তনাদ করছে আশ্রিত মানুষ। তবে কিছু জায়গায় জনপ্রতিনিধিদের ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয়দের উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে খিচুড়ি ও শুকনো খাবার। বিশেষ করে ভোলাগঞ্জ আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, ভোলাগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন, ভোলাগঞ্জ স্কুল ও হাইস্কুলে প্রায় ১ হাজার মানুষের খাবার যোগান দিচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ভোলাগঞ্জ আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি শাহাব উদ্দিনের উদ্যোগে ও হাইস্কুলের সভাপতি আবুল বাশারের তত্ত¡াবধানে এলাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন তাদের খাবারের যোগান দিয়ে আসছেন। পাড়ুয়া স্কুল ও হাইস্কুলে প্রায় ৮ শত মানুষের খাবার যোগাড় করছেন ওয়ার্ড সদস্য মোঃ লিটন মিয়া। তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ও নিজের তহবিল থেকে তাদেরকে খাবার দিচ্ছেন। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় স্থানীয়দের উদ্যোগে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছে আশ্রিত মানুষের মাঝে।
বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছে উপজেলার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ। যারা তাদের ঘর থেকে কিছুই আনতে পারেনি। এদের প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা। সরকারি কর্তাদের সদিচ্ছার অভাবে ভুগতে থাকা বানভাসী এসব মানুষ চায় বেঁচে থাকার জন্য একটু সহানুভ‚তি।
বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় মানুষ গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি একই বিল্ডিংয়ে রয়েছে। এছাড়া রাস্তার উপর তাঁবু ও রাস্তায় ভাসমান ট্রাকে তাঁবু বানিয়ে একই সাথে বসবাস করছে মানুষ ও গবাদিপশু।