আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সংকট
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২২, ১২:৩০:৩৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। কারো কারো বাসাবাড়ী থেকে পানি নামতে শুরু করলেও এখনো বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সিলেট নগরী, শহরতলী, বিভিন্ন উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ভূগছেন বন্যার্তরা। এছাড়া অনেকে বাসার উপরতলাগুলোতে অবস্থান করে পড়েছেন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কটে। বিদ্যুৎ না থাকায় ও যাতায়াতের রাস্তায় বেশী পানি থাকায় অনেকে বাজার করতে পারছেন না ঠিকমতো। প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা না পৌঁছায় আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা খাদ্যসঙ্কট মেটাতে নিজেদের জমানো সঞ্চয় আর মানুষের সহায়তার দিকে পথ চেয়ে আছেন।
যোগাযোগের সুবিধা থাকা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার রান্না করা খাবার বিতরণ হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবারের জন্য হাহাকার চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ের অভাবে কিছু কেন্দ্রে বারবার খাবার মিললেও অনেক কেন্দ্রে একবারও মিলছেনা খাবার। তবে সোমবার থেকে নগরীর ৫৬টি কেন্দ্রের জন্য শুকনো খাবার হিসেবে গুড় ও চিড়া বিতরণ করা হবে বলে সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে ১২২ বছরের সর্বোচ্চ বন্যার কবলে পড়েন সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষ। এক মাসের ব্যবধানে ২য় ধাপের এমন ভয়াবহ বন্যায় দিশেহারা মানুষ। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র বন্যায় প্লাবিত। প্রথমদিকে যাদের বাসা-বাড়ীতে পানি উঠেছিল শুরুতেই তারা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে উঠেন। কিন্তু এবারের বন্যার ভয়াবহতা ক্রমশ বাড়তে থাকায় শেষের দিকে বন্যায় আক্রান্তরা অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা খুঁজে পাননি। কেউ আত্মীয় ও পরিচিতজনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন কেউ নিচ তলা থেকে বহুতল ভবনের উপরতলার দিকে শিফট হয়েছেন। যাতায়াত ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় ত্রাণ কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে। বেসরকারী, সামাজিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীদের উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি রান্না করা খাবার বিতরণ করা হলেও সরকারীভাবে খাবার দিতে কোন উদ্যোগ না থাকায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যার মধ্যেও যারা এখনো বাসা বাড়ীতে আছেন অনেকের ঘরে চাল-সবজি থাকলেও সেগুলো রান্না করে খাওয়ার মতো ব্যবস্থা নেই। বেশিরভাগ ঘরবাড়িতে পানিতে কারণে আগুন জ্বালানের ন্যূনতম সুযোগও নেই। এমন চিত্র শুধু সিলেট নগরীর নয়, সিলেটের বন্যা কবলিত উপজেলা ও সুনামগঞ্জের প্রায় সব উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রে। এমন অবস্থায় সকল আশ্রয় কেন্দ্রে সময় মতো খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বন্যাদূর্গতরা।
নগরীর কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা বন্যার্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে এলাকায় ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। রিকশা ও বড় যানবাহন পানি ডিঙিয়েই চলছে। নগরীর সুবিদবাজার, শামীমাবাদ, উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর সহ একাধিক মূল সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চারদিকে থৈ থৈ পানি। রাস্তা, দোকানপাট, বাসাবাড়ি, ঘরের মধ্যে পানি। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত। কিছু ক্ষেত্রে বহুতল ভবনের বন্যায় তলিয়ে যাওয়া নিচতলায় ছেড়ে উপরের বিভিন্ন তলার রুমে অবস্থান করতে দেখা গেছে অনেক পরিবারকে।
নগরীর ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর জন্য চিড়া মুড়ির ব্যবস্থা হয়েছে। যা আজ সোমবার থেকে দেয়া হবে। আশ্রয় কেন্দ্রে যারা খাবার দিচ্ছে তাদেরকে স্থানীয় কাউন্সিলারদের সাথে সমন্বয় করা উচিত। এতে অন্যান্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও খাবার পাবে। সমন্বয় না হলে কিছু আশ্রয় কেন্দ্র খাবার থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে। এক্ষেত্রে আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার দেয়ার আগে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সংগঠন নেতৃবৃন্দদেরকে স্থানীয় কাউন্সিলারের সাথে সমন্বয় করার আহ্বান জানান তিনি।