বেঁচে থাকার লড়াই
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২২, ১২:৫৫:৫৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ভয়াল বন্যার ৪র্থ দিনে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন স্থানে পানি কমতে থাকার পরও এখনো বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বন্যার্তরা। পানি কমলেও শঙ্কা ও দুর্ভোগে ভেঙ্গে পড়ছেন বন্যার্ত মানুষ। চরম দুর্দিন কাটছে তাদের। কেউ উচু স্থানে থাকা স্বজনদের ঘরে আবার কেউ রয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। দিনে এক বেলাও তাদের খাবার জুটছে না। দেখা মিলছে না জনপ্রতিনিধিদেরও। নামমাত্র সরকারী ত্রাণ সামগ্রীতে ক্রমশ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন অনেকে। বয়স্ক ও শিশুরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে।
বন্যার্ত প্রায় প্রতিটি পরিবারে তীব্র খাদ্য সঙ্কট। শহরে দোকানপাট চালু থাকায় নিত্যপণ্য কেনা সম্ভব হলেও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা ও সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজার ও দোকান পাট এখনো পানির নিচে। সেসব এলাকায় নিত্যপণ্যের জন্য চলছে হাহাকার। রাস্তার পাশে কিংবা যোগাযোগ সুবিধা থাকা এলাকায় একাধিকবার ত্রাণ সামগ্রী ও শুকনো খাবার পেলেও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের ভাগ্যে ঝুটছে কিছুই। কিছু পরিবারে নিত্যপণ্য থাকলেও তা অপ্রতুল। অনেক পরিবার নিজেরা ঘরে খাটের উপর আশ্রয় নিলেও গবাদী পশুকে পানির উপর দাঁড় করিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। গবাদী পশুর খাবার না থাকায় অধিকাংশ পশু রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। পানি নেমে যাওয়ার গতি একেবারে কম থাকায় বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন বন্যা কবলিত মানুষ।
ভয়াবহ বন্যার চতুর্থ দিনে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জে। সিলেটের উঁচু জায়গাগুলো থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নেমেছে সুনামগঞ্জের প্রধান প্রধান সড়ক থেকেও। তবে শেষ হয়নি আশঙ্কা। রোববার থেকে থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার যদি আবারও বৃষ্টিপাত বাড়ে তাহলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পানিও বাড়বে।
জানা গেছে, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পানি নামায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে চালু হয়েছে। পাড়া মহল্লার পানি এখনো খুব একটা না কমলেও সেখানকার মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারছে। রোববার সন্ধ্যায় এই জেলায় পৌঁছেছে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে নিযুক্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। তবে এখনো অনেক যায়গায় ত্রাণ পৌঁছায়নি বন্যাদুর্গতদের মাঝে। রোববার দিবাগত রাতে সুনামগঞ্জে খুব একটা বৃষ্টি হয়নি। তবে সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিস জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি চোখে পড়ছে। উঁচু জায়গাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সেইসঙ্গে ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত সিলেটে খুব একটা বৃষ্টি হয়নি। তবে আকাশ মেঘলা, যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি নামতে পারে।
সিলেটে সুরমা নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলেও বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। তবে সুরমা নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ইতোপূর্বে প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে। নগরীর নিন্মাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপশহরের প্রধান সড়কে এখনও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে যায়। ফলে বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অবশ্য সারি ও লোভাছড়া নদীর পানি কমেছে।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে ১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম জানান, সুরমা নদীতে ধীরগতিতে পানি কমছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলে মঙ্গলবার আরো পানি কমবে। কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। তবে তা মারাত্মক কিছু হবে না। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জে প্লাবিত এলাকার পানি ধীরে ধীরে কমছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নদীর পানি কমতে থাকায় নগরীতে প্লাবিত এলাকাগুলোর পানিও কমতে শুরু করেছে। তবে উপশহর, সোবহানীঘাট, তালতলা, কানিশাইল, তেররতন, ঘাসিটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও পানি রয়েছে। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও প্লাবিত এলাকার মানুষ এখনও অন্ধকারে রয়েছেন। এসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম সংকটে রয়েছেন নগরীর পানিবন্দী মানুষ।