সুনামগঞ্জে কিছুটা কমেছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২২, ৮:৩৭:১৯ অপরাহ্ন
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার বিচ্ছিন্ন জনপল্লীর বানভাসিরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। শহর ও শহরতলীর আশপাশে সরকারী-বেসরকারী কিছু ত্রাণ বিতরণ করলেও হাওর এলাকার বিচ্ছিন্ন পল্লীর বানভাসিদের এখনো খোঁজ নেয়নি কেউ।
জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লাসহ সব ক’টি উপজেলার হাওর এলাকার বন্যা কবলিত লোকজন এখন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। ট্রলার নৌকা দেখলেই বানভাসিরা একটু ত্রাণ পাওয়ার আশায় দৌড়ে এসে জড়ো হয়। বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও, বাড়ছে বানভাসিদের দুর্ভোগ। এই ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে জেলার সবকটি উপজেলার নিভৃত বিচ্ছিন্ন পল্লীগ্রাম। তবে গ্রামের কিছু কিছু পুরাতন বাড়িতে (আংশিক) পানি উঠেনি। এ ছাড়া ঘরে-বাইরে পানি, কোথাও তিল পরিমান ঠাঁই বাকী নেই। আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানিয় জলের অভাবে বানভাসি মানুষেরা দিশেহারা। বানভাসি মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। ঘরে ঘরে বন্যার পানি। পানিবন্দি জেলার লাখো মানুষের কয়েক দিন যাবৎ রান্না বন্ধ, পয়ঃনিস্কাশন কঠিন অবস্থায়। কান্নার রোল আর আহাজারিতে পুরো জেলা তটস্থ। সব মিলিয়ে সুনামগঞ্জ জেলায় চলছে মানবিক বিপর্যয়।
এবারের বন্যার ভয়াবহতা বিগত শত বছরের ইতিহাসকে ছাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেক মুরব্বীরা। এবারের ভয়াবহ বন্যার ভোগান্তি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। নেই বিদ্যুত, বিশুদ্ধ পানির সংকট, পয়:নিস্কাশের সমস্যা। কোন রকম শুকনো খাবার মুখে দিয়ে, খাদ্য সংকটে দিনরাত পার করছে বানভাসী মানুষ জন। সবচেয়ে ভোগান্তির মধ্যে গর্ভবতী মা শিশু ও বয়ষ্করা। বানভাসি মানুষ তাদের গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী নিয়েও কঠিন সময় পার করছেন।
এদিকে, বানভাসি মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে দিকবিদিক ছুটছেন। যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই গৃহপালিত পশুদের সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক পরিবারের নিজস্ব নৌকা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বাড়ি-ঘরে আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে। তাছাড়া হাট-বাজারগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি গুরুত্বপ‚র্ণ অফিসগুলোতে পানি ঢুকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গোটা জেলায় অফিস পাড়া। শুধু দ্বিতল ভবনের অফিসগুলোতে কোন রকম কার্যক্রম চলছে। বানের এই সুযোগে চিড়া, মুড়ি, কুপিবাতি, মোমবাতি, গ্যাস সিলিন্ডারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে ব্যস্ত এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীরা। বাসা বাড়িতে পানি থাকায় রান্না করতে না পারায় সবচেয়ে বেশি খাদ্য সংকটে ভুগছে শহর ও শহরতলীর মধ্যবর্তী পরিবারের মানুষও। তারা সহজেই কারো কাছে হাত পাততে পারছেননা। গ্রামের মানুষজনের সারা বছরের খোরাক ধান চাল সবই পানির নিচে। গত ৪/৫ দিন ধরে নেই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোবাইল নেটওয়ার্ক। জরুরী ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। সবারই আয় রোজগার বন্ধ। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। জেলা প্রশাসন ও সব উপজেলা প্রশাসন সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমান চাল ও শুকনো খাবার বিতরন করছে, তা একেবারেই অপ্রতুল।
জেলার সব উপজেলা মিলে প্রায় ৫’শতটির মতো আশ্রয় কেন্দ্রে লাখের উপরে বানভাসী মানুষ অবস্থান করছেন। জেলার অধিকাংশ স্থানে সীমিত আকারে বিদ্যুত ও মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হলেও সেবার মান একেবারেই নিম্নমানের।
জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী হাওর এলাকা বা কোথাও কেউ আটকা পড়েছে কি-না তা দেখছে। আটকা পড়ে থাকলে উদ্ধারের ব্যবস্থা করবে।
এদিকে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় দুই দিন যাবত বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের হেলিকপ্টারে বন্যা কবলিত মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছে। হেলিকপ্টার থেকেই বিভিন্ন ত্রাণ ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এ সব প্যাকেট ধরতে ক্ষুধার্ত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এতে জামালগঞ্জে কয়েকজন হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।