গোয়াইনঘাটে ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি সম্পদ হারিয়ে দিশেহারা মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২২, ১০:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন
মোঃ আব্দুল মালিক, গোয়াইনঘাট :
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নিঃস্ব গোয়াইনঘাটবাসী। বন্যায় ক্ষতি হয়নি এমন বাড়ী বা এমন কোন লোক নেই। অনেকেই ঘরবাড়ী, গরু, মহিষ, ছাগলসহ সম্পদ হারিয়ে দিশেহারা। ঘরে নেই খাবার। নেই নিরাপদ বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। বন্যার হিংস্র তান্ডবে ধ্বংস হয়ে গেছে রাস্তাঘাট। নেই সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরই মধ্যে বন্যাক্রান্ত বানভাসীদের মধ্যে চলছে সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক নানা উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতা। চলমান এই ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রয়োজনে তা অপ্রতুল।
গোয়াইনঘাট ৪র্থ বারের মত বন্যাক্রান্ত হলো। পরপর বন্যায় এমনিতেই মানুষের নাভিশ্বাস ছিল বিরাজমান। ১৩ জুন থেকে পানি আবার বাড়তে শুরু হয়। বন্যা যে এত বড় হবে তা ছিল মানুষের কল্পনাতীত। ১৭ জুন ভোরে নিমিশেই মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ হয়ে উঠে কেউ কোথাও আশ্রয় নেবার সুযোগটুকু পায়নি। ঘরের চৌকি, ছাদে আশ্রয় নেয়। গত শতাধিক বর্ষেও এমন বন্যা ঐ এলাকাবাসি দেখেননি। ইউএনও এর প্রচেষ্টায় ২০টি উদ্ধারদল সেনাবাহিনী, এলাকার লোকজনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিরাপদে অবস্থান করায় কোন প্রাণহানি ঘটেনি। ঘরবাড়ি গোবাদি পশু সম্পদ হারিয়ে গোয়াইনঘাটের মানুষ প্রায় নিঃস্ব। বিদ্যুৎ মোবাইল, ইন্টারনেট যোগাযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন।
ইউএনও তাহমিলুর রহমান জানান, প্রথম ধাপে ৪০টি, পরে ১১৩টি সরকারী স্থাপনায় লোকজন আশ্রয় নেয়। সরকারীভাবে গতকাল পর্ষন্ত ১৬২ মেঃ টন চাল, ২৭শত প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছে। ত্রাণ বিতরণ চলছে, প্রতি ইউপি ও ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে যাতে আক্রান্তরা বঞ্চিত না হয়। বন্যার এই ভয়াবহতা দেখে এসএসসি সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়েছে মানুষের। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রান্না খাবার দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ পর্যাপ্ত রয়েছে। ৩টি ওয়াটার ট্রটমেন্ট প্লান্ট নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। মেডিকেল টিম কাজ করছে।
ত্রাণ বিতরণে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি সংগঠন এগিয়ে এসেছে। তবে বিতরণে সমন্বয়ের অভাবে কেউ বার বার পাচ্ছে আর কেউ একেবারেই বঞ্চিত রয়েছে। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে সূদুর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও একই চিত্র চোখে পড়ছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা শহিদ মিনার চত্তরে ছুটে আসে শত শত মানুষ। ১০নং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের পুকাশ এলাকার সমিতা রানী দাস, লেঙ্গুড়ার সাইদা বেগম জানান, তারা এখন পর্যন্ত সহায়তা পাননি। এমন অভিযোগ উপজেলা সদরে ত্রাণ নিতে আসা অগণিত নারী পুরুষের। গোয়াইঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু সুভাস চন্দ্র পাল ছানা বলেন, সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কোন কোন জায়গায় আক্রান্ত পরিবারগুলো একাধিকবার আবার কোন কোন পরিবার একবারও ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না এমন অভিযোগ আসছে। ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়তা প্রয়োজন। প্রয়োজনে ত্রাণদাতারা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে পারেন। এভাবে করলে কেউ বঞ্চিত থাকবেনা। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। গোয়াইনঘাটে বন্যার পানি এখনও অগণিত ঘরবাড়ীতে বিরাজ করছে। সকল প্রকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গতকালও এমসি সিলেটের ২১তম ব্যাচের উদ্যোগে গোয়াইনঘাটে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।