বন্যায় লণ্ডভণ্ড ছাতক রেলপথ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০২২, ৬:৪০:০৭ অপরাহ্ন
ছাতক প্রতিনিধি: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-ছাতক রেলপথের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বানের পানির তীব্র স্রোতে রেল লাইনের প্রায় ১৩ কিলোমিটার অংশ লÐভÐ হয়ে গেছে। অধিকাংশ স্থানে রেলপথের মাটি পাথর সরে ঝুলে রয়েছে ¯িøপার। ছাতক থেকে গোবিন্দগঞ্জ আফজলাবাদ স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের এমন অবস্থা। অনেক জায়গায় ¯িøপারের নীচের কাঠ সরে গিয়ে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ১৩ কিলোমিটার রেলপথ স্বাভাবিক হওয়া নিয়ে জনমনে শংকা দেখা দিয়েছে।
করোনা মহামারির সময় এ রেলপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে এ রেলপথটি আজ ধংশ হয়ে গেছে। ১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন হতে পশ্চিম-উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৩৫ কি.মি. রেলপথ নির্মাণ করা হয়। ওই সময়ে এই রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়।
আগে এটি ছিলো আখাউড়া-কুলাউড়া-সিলেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাথর, বালি, চুনাপাথর, কমলালেবু ও তেজপাতাসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়ার জন্যই মুলত রেলপথটি নির্মিত হয়েছিলো। পরে শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল পরিবহন ও ছাতক-দোয়ারাবাজার অঞ্চলসহ সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের যাতায়াত সুবিধার ব্যাপক উন্নতি হয় রেলপথের মাধ্যমে। এ অঞ্চলের মানুষের সে সময় থেকেই ছিলো একমাত্র ভরসা রেলপথ। শুরু থেকেই রেল বিভাগের রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে ছাতক-সিলেট রেলপথটি। ১৯৭৯ সালে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রাজস্ব আয়ে ছাতক বাজার স্টেশন শ্রেষ্ঠত্বের স্থান দখলে করে নেয়। প্রতিদিনই এ পথে ৩টি ট্রেন যাতায়াত করতো। মাঝে নানান অজুহাত দেখিয়ে কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেন ও বগির সংখ্যা। ট্রেনে করে প্রায় ৪৫ মিনিটে ছাতক থেকে সিলেট পৌঁছানো যায়।
সিলেট-ছাতক রেলপথের ট্রেন পথিমধ্যে খাজাঞ্চীগাঁও, সৎপুর ও আফজালাবাদ স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। ছাতক অঞ্চল, সিলেটের সৎপুর ও খাজাঞ্চীগাঁও এলাকার কয়েক হাজার মানুষের সিলেট শহর ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একসময় যোগাযোগের এই রেলপথই ছিল একমাত্র মাধ্যম। শিল্প শহর ছাতক থেকে চুনা পাথর, সিমেন্ট, স্লিপার, বালু, বোল্ডার পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে এ রেলপথে সড়ক পথের চেয়ে পরিবহন খরচ কয়েক গুণ কম। সিলেট থেকে ছাতকে রেলপথের দুরত্ব ৩৬ কিলোমিটারের ভাড়া মাত্র ১০ টাকা। ট্রেনের ভাড়া ১০ টাকার বিপরীতে বাসের ভাড়া বর্তমানে ৬০ টাকা ও সিএনজি ভাড়া ৮০ থেকে ১০০টাকা। সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ও সহায়তার চাল-গম ইত্যাদি এ রেলপথে পরিবহনেও অনেক সুবিধা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রেলপথে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ছাতক নিয়ে এসে নৌপথে জেলার অন্যান্য উপজেলায় পৌঁছানো সহজ। এতে ট্রাক ভাড়ার চেয়ে প্রায় কয়েকগুন সরকারি অর্থ সাশ্রয় হতো বলে জানা গেছে।
রেলপথটি লাভজনক হওয়ার কারণে পাথর পরিবহনের জন্য দেশের একমাত্র ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ স্থাপিত হয়। এখানে স্থাপিত হয়েছে একমাত্র সরকারি কংক্রিট ¯িøপার প্ল্যান্ট। দুটি প্রকল্প এখন বন্ধ রয়েছে। ছাতকে রয়েছে রেলওয়ের ৩০০ একর মূল্যবান ভুমি ও অর্ধ শতাধিক স্থাপনা। সবই ঠিকঠাক শুধুমাত্র রেল চলাচল করছেনা। গুরুত্বপূর্ণ এই রেলপথটি দ্রæত সংস্কার করা না হলে ¯িøপার ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি চুরি হয়ে যাবারও আশংকা রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথটি দ্রæত সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ছাতকে রেলওয়েতে ২ জন দায়িত্বশীল রয়েছেন। একজন মাহবুবুল আলম এসএসই (ইলেক) থাকেন ঢাকায়। কর্মস্থলে না থাকার ফলে স্টেশনসহ সরকারি কোটি-কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ এখানে অরক্ষিত। এইএন জুবায়ের আহমদের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বন্যায় রেলপথের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রেলপথের দায়িত্বে সিলেটের এইএন। তিনি ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান বলতে পারবেন।