বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত: বড়লেখায় বানভাসিরা সীমাহীন দুর্ভোগে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুলাই ২০২২, ৯:৪১:২৯ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি : বড়লেখায় গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার কোন উন্নতি হয়নি। প্রতিদিনের বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। ১৬ দিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগে বানভাসিরা। উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ৫টির শতভাগ ও ৫ ইউনিয়নের আংশিক এলাকা এখনও বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। পৌরসভার কিছু এলাকায় সামান্য পানি করলেও রাস্তাঘাট চলাচল ও বসতবাড়ি বসবাস উপযোগি হয়নি। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও দুরবর্তী প্রত্যন্ত অনেক এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি বলে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সুজানগর, বর্নি ও তালিমপুর ইউনিয়ন কমপ্লেক্স এবং বেশ কয়েকটি হাটবাজারে ১ থেকে ৩ ফুট পানি থাকতে দেখা গেছে। ১৬-১৭ দিন ধরে এসব ইউনিয়ন অফিসের সেবাকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার হাকালুকি হাওরপাড়ের বর্নি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের আম্বিয়া বেগম জানান, কাচা ঘরে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনমতে বসবাস করতেন। বন্যায় ঘর-দরজা সব ভেঙ্গে এখন তিনি নিঃস্ব। একবার ত্রাণ পেলে ২-৩ বেলা খেতে পারেন। পেট বাঁচাতে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কাজিরবন্দ ছালিয়া গ্রামের আজিজুন নেছা জানান, ঘরে কোমর পানি। না পারছেন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে না পারছেন বাড়িতে থাকতে। ১৫-১৬ দিন ধরে এক দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। এখনও তিনি সরকারি কোন ত্রাণ পাননি। বিভিন্ন ব্যক্তি কিছু খাদ্যসামগ্রি দিয়ে গেছেন। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন একই গ্রামের দিনমজুর আশুক মিয়া। বন্যায় ফসলি জমি, বাড়িঘর, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট সব তলিয়ে যাওয়ায় কোন কাজকর্ম নেই। বসতঘরে কোমর পানি। ধসে পড়েছে বেড়া। ঘরের ভেতর কচুরিপানার স্তুপে বসবাস করছেন। কেউ ত্রাণ নিয়ে আসলে পেটে খাবার পড়ে।
ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, বন্যায় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়লেখা। উপজেলার ২০০ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার শুরুতেই বন্যাদুর্গতদের জন্য ২১টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় আরও ২৯টিসহ মোট ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। শুরু থেকেই আশ্রয়কেন্দ্র এবং বসতবাড়িতে পানিবন্দি থাকা বন্যাদুর্গতদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ইতিমধ্যে ১৮৫ টন চাল বরাদ্দ এসেছে। জিআর ক্যাশ ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে পানিবন্দিদের মধ্যে শুকনো খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়া শিশু খাদ্যের ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ৩ লাখ টাকা এবং ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১২ হাজার প্যাকেট ডানো গুড়ো দুধ মজুদ রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন সবাই বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যে কারণে বন্যার্তদের খাদ্যের সংকট তৈরি হয়নি। এরপরও দুর্গত কারো ত্রাণ না পাওয়ার খবর পেলেই তিনি দ্রæত পৌঁছে দিচ্ছেন।