বন্যায় ক্ষতবিক্ষত সিলেটের গ্রামীণ সড়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০২২, ৩:০১:০৬ অপরাহ্ন
চার জেলায় ১,৫২৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত
ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ৮৫ শতাংশই সিলেট বিভাগের
জালালাবাদ রিপোর্ট :
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা বিধ্বস্ত। ক’দিন আগে খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন, সিলেটে ৩০ বছরে গড়ে উঠা গ্রামীণ সড়ক ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে বন্যা। আর এবার এলজিইডি জানিয়েছে, বন্যায় সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ৮৫ শতাংশই সিলেট বিভাগের।
বন্যার পানি নামার পর সড়কে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু সেতু ও কালভার্ট। সড়কের ভাঙা অংশ পার হতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার মানুষজনকে। প্রায় এক মাস পার হলেও এসব সড়ক এখনো সংস্কার হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রক্ষণাবেক্ষণ শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক হিসাবে বন্যাকবলিত সিলেটের চার জেলাসহ ১৭ জেলায় ১ হাজার ৭৮৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন জেলার এলজিইডি কার্যালয় থেকে সদর দপ্তরে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পেয়েছে অধিদপ্তর।
এলজিইডির তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্টের বড় অংশই সিলেট বিভাগের চার জেলা-সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এই চার জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৫২৬ কিলোমিটার সড়ক, যা এবারের বন্যায় সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত মোট সড়কের ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি। সর্বোচ্চ ৬৪৭ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট জেলায়। সুনামগঞ্জ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৫৫ কিলোমিটার সড়ক। এবার সুনামগঞ্জে তিন দফায় বন্যা হয়েছে। গত ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় দফার বন্যায় সুনামগঞ্জের সব উপজেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়।
বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ-দিরাই সড়ক বেহাল হয়ে পরেছে। ছাতক উপজেলার ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের হাসনাবাদ, কালারুকা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়কও ভেঙে গেছে।
সড়ক মেরামতের বিষয়ে এলজিইডির রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম মহসীন বলেন, বন্যাকবলিত জেলাগুলো থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তথ্য আসছে। তবে এটি ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব না। জেলা পর্যায় থেকে পাঠানো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আরও যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে। এখন পর্যন্ত বন্যায় সিলেট বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মেরামত ও পুনর্র্নিমাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
বন্যাপ্রবণ এলাকায় সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে পানিনিষ্কাশনব্যবস্থাকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, পানিনিষ্কাশনকে গুরুত্ব না দেওয়ায় একদিকে বন্যায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বন্যার পানি দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে। সড়ক নির্মাণের সময় পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি।