সিলেটে ১৫ দিনে প্রাণ গেলো ২৩ জনের
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুলাই ২০২২, ১:০০:০২ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
সিলেটের মহাসড়কগুলো যেন দিন দিন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনায় ঘটছে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। চলতি মাসের ১৫ দিনে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে শুধু সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ১৫ জন, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ৩ জন। এ ছাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বিয়ানীবাজারে ২ জন, কোম্পানিগঞ্জে ১ জন, কানাইঘাটে আরো একজন, বানিয়াচংয়ে একজন নিহত হন।
পৃথক এসব ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পঙ্গু হওয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। সর্বশেষ সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগরের তাজপুরে ১ জন ও বিয়ানীবাজারে একজন নিহত হন। এতে আহত হনে আরো ৩ জন।
এমন বাস্তবতায় আলোচনা-সমালোচনার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মহাসড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অপ্রশস্ত রাস্তা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি আর চালকদের অসচেতনতার বিষয়টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওসমানীনগর এলাকাটি ডেঞ্জারজোন হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনায় ঘটছে। গত তিন মাসে বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর এ মহাসড়কটি আলোচনায় আসে। শুধু এই পয়েন্টেই নয়, দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার, নাজির বাজার, ওসমানীনগর, সাদিপুরসহ বেশকিছু স্থানে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। প্রাণহানির পাশাপাশি অনেকেই অঙ্গ হারিয়ে সারাজীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন দুর্ঘটনার ক্ষত। এসব স্থানে চলতি বছরে প্রায় শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। তবে দুর্ঘটনার সঠিক কোন হিসেব দিতে না পারলেও প্রতিদিন অন্তত দু’একটি করে দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে হাইওয়ে পুলিশের সিলেট জোন জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালকদের অতিরিক্ত ডিউটি ও আয় করার প্রবণতায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। ভাঙাচোরা ও ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, ওভার টেকিং, নিয়ম না মানার প্রবণতা এবং জনসচেতনতার অভাবে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া যানজটে পড়ে সময় ক্ষেপণ হওয়ায় পরবর্তীতে দ্রুত চালিয়ে তা পুষিয়ে নেয়ার মানসিকতাই আর চালকদের বেসামাল আচরণের কারণে ঘটছে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেটের সভাপতি ময়নুল ইসলাম অভিযোগের ব্যাপারে নিজেদের অসচেতনতার দায় কিছুটা স্বীকার করেছেন। এই পরিবহন নেতা বলেন, ঠিকঠাকভাবে গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যেই চালকরা গাড়ি চালান। এর মাঝেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তবে কিছু অসচেতনতার দায় তো চালকদের আছেই। চালকদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি আছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হাইওয়েতে যেসব যানবাহন চলাচল করে সেগুলোর চালক আলাদাভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এছাড়া বড় বড় কোম্পানির বাস চালকদের জন্য নিজস্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্যমতে ও অন্য কয়েকটি সূত্র জানায়, ২০ জুলাই দুপুরে ওসমানীনগর উপজেলার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তাজপুর দিগর-গয়াসপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এনাম বকস (২৬) নামে একজনে নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের ছালিক বকসের ছেলে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরো ২ জন।
একই দিন সিলেট-বারইগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কে দূর্ঘটনায় আসাদুজ্জামান মুন্না (২২) নামের এক যুবক নিহত হন।
১৯ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বালুবাহী ট্রাক চাপায় হিরা মিয়া (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ রিকশা চালক নিহত হয়েছেন। চুনারুঘাট পৌর এলাকার লক্ষীপুর নামক স্থানে এ ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত হিরা মিয়া ধলাইপার গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে।
১৮ জুলাই দুপুর ২টার দিকে হবিগঞ্জের মাধবপুরে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে চারজন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনা ঘটে উপজেলার বাখরনগর গেইট নামক স্থানে। নিহতরা হলেন, নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার ফহেতপুর গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে মুরাদ মিয়া (২২), একই গ্রামের সুরুজ আলীর স্ত্রী দিলারা বেগম (৪০) ও ইমরুল মিয়ার স্ত্রী হেলেনা আক্তার (২৫)। নিহত অপর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
১৭ জুলাই সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নবীগঞ্জ আউশতান্দির রুস্তমপুর টোলপ্লাজায় বাস-সিএনজিচালিত অটোরিকশা সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হন। তারা হলেন, রব্বানী মিয়া, বকুল বেগম ও ইয়াহইয়া আহমদ চৌধুরী।
একই দিন সিলেট-বারইগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে কাসস আহমদ নামের এক বৃদ্ধ মারা যান।
১৩ জুলাই বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার রতনপুর নামক স্থানে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের এক্তারপুর গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে আরিফ (১৯) ও ফরাশ উদ্দিনের ছেলে লিটন (২০)। দুর্ঘটনায় রনি নামে অপর একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
১১ জুলাই সোমবার সকাল ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ফয়েজ আহমদ (২৩) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী ও অটোরিকশার যাত্রীসহ আরো ৬ জন আহত হয়েছেন।
৯ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় কানাইঘাট উপজেলার সড়কের বাজারের দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু মারা যান। এ ঘটনায় আরো তিনজন আহত হন। নিহত তৌহিদ আহমদ (১৭) কানাইঘাট উপজেলার সাতবাঁক ইউনিয়নের জুলাই মাঝরচটি গ্রামের কটাই মিয়ার ছেলে।
৭ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাধবপুরের দেবপুর মদিনা মার্কেট এলাকায় মোটরসাইকেলের চাপায় সিরাজুল ইসলাম শেরু মিয়া (৬৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন।
একই দিন দুপুর ২টায় হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত মানিক মিয়া (৫০) বানিয়াচং উপজেলা সদরের জাতুকর্ণপাড়া উত্তর হাটি গ্রামের উমেদ উল্লার ছেলে।
৬ জুলাই বুধবার সকালে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে সিমেন্ট বোঝাই কাভার্ডভ্যানের চাপায় পায়েল মিয়া (২০) নামে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালক নিহত হয়েছেন। নিহত পায়েল মিয়া আজমিরিগঞ্জ পৌরসভার নগর গ্রামের কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে। ৫ জুলাই মহাসড়কের ওসমানীনগরে সবজীবাহী ট্রাক উল্টে ৩ জন নিহত হন। তারা হলেন- সাজিদ মিয়া, ছালিক মিয়া ও আরকান হোসেন।
৩ জুলাই সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুরের চিকসাগুল ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে ৩ বন্ধু নিহত হন। তারা হলো- জসিম উদ্দিন (১৬), আজিম উদ্দিন (১৬) ও ফহিদ রহমান অমি (১৬)। নিহতরা সকলেই জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
হাইওয়ে পুলিশ শেরপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ পরিমল চন্দ্র দেব জালালাবাদকে বলেন, আমরা সড়কে নিয়মিত অভিযান চালাই। তাছাড়া স্পিডগান ব্যবহার করে বেপরোয়া যানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রতিমাসেই তিন থেকে চার শতাধিক যানবাহনকে অনলাইনের মাধ্যমে মামলা দেয়া হয়।