শ্রীলঙ্কায় হাসপাতালে বন্ধ অস্ত্রোপচার, রোগীদের আর্তনাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২২, ৮:০৪:৩৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। সংকট এতোটাই চরমে পৌঁছেছে যে, জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার বহু হাসপাতাল। দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির বৃহত্তম হাসপাতালও রয়েছে। ফলে সেবা না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় ফিরছেন রোগীরা, বন্ধ রয়েছে অস্ত্রোপচার। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম হাসপাতালে সব ওয়ার্ড অন্ধকার এবং প্রায় খালি। এই হাসপাতালে কিছু রোগী অবশিষ্ট থাকলেও তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না এবং যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এমনকি সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চিকিৎসকরাও তাদের দায়িত্বপালনে হাসপাতালে আসতে বাধার মুখে পড়ছেন।
এএফপি বলছে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন শ্রীলঙ্কান নাগরিক থেরেসা মেরি। নিজের অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য রাজধানী কলম্বোতে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল হাসপাতালে যান তিনি। তবে বহু কষ্টের পর তিনি হাসপাতালে পৌঁছান। কোনও গাড়ি না পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর শেষ পাঁচ কিলোমিটার (তিন মাইল) থেরেসা মেরিকে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। হাসপাতালে যাওয়ার চার দিন পরই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এখনও নিজের পায়ে দাঁড়ানো তার জন্য বেশ কঠিন। কারণ ডিসপেনসারিতে ভর্তুকিযুক্ত ব্যথানাশক ওষুধ শেষ হয়ে গেছে, আর তার যন্ত্রণাও রয়েছে আগের মতোই।
এএফপি বলছে, অসুস্থ রোগীদের মধ্যে যাদের কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা প্রয়োজন হয়, তাদেরই চিকিৎসা করে থাকে শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতালটি এখন অনেক কম স্টাফ নিয়ে চলছে এবং হাসপাতালের ৩ হাজার ৪০০ শয্যার মধ্যে বহু এখন খালি পড়ে আছে।
সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং জীবন-রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া পেট্রলের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে রোগী এবং চিকিৎসকদের অনেকেই এখন হাসপাতালে আসতে পারছেন না।
শ্রীলঙ্কার সরকারি মেডিকেল অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডা. ভাসান রতœসিংহাম এএফপিকে বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের জন্য নির্ধারিত যেসব রোগীর শিডিউল দেওয়া রয়েছে, তারা হাসপাতালে আসতে পারছেন না। কিছু মেডিক্যাল স্টাফ ডাবল শিফটে কাজ করছেন। কারণ অন্যরা ডিউটি করতে আসতে পারছেন না। তাদের গাড়ি আছে, কিন্তু জ্বালানি নেই।’
এদিকে, অত্যধিক মুদ্রাস্ফীতি শ্রীলঙ্কায় খাদ্যপণ্যের দাম এত বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে যে অনেক পরিবার এখন নিজেদের খাবারের জন্য কার্যত লড়াই করছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তথ্য অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার প্রায় ৫০ লাখ মানুষের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির প্রতি ছয় পরিবারের মধ্যে পাঁচটির বেশি পরিবার উপবাস অথবা কম খেয়ে অথবা নি¤œমানের খাবার কিনতে বাধ্য হচ্ছে।