সিলেটে আমনের ফলনে ধাক্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ আগস্ট ২০২২, ৪:০১:৪০ অপরাহ্ন
Ο পানি কমলেও মাটি পুরোপুরি শুকায়নি
Ο বীজতলাই তৈরী হয়নি অধিকাংশ এলাকায়
স্টাফ রিপোর্টার :
বন্যায় সিলেটে আমনের ফলনে চরম ধাক্কা লেগেছে। এবার সিলেট ও সুনামগঞ্জে সময়মতো আমনের আবাদ শুরু করা যায়নি। পানি কমলেও মাটি পুরোপুরি শুকায়নি। কিছু কিছু এলাকায় পানি এখনো নামেনি। এই অবস্থায় বীজতলা তৈরিসহ ক্ষেতে চারা লাগাতে অনেক সময় লাগবে। এই বিলম্বের কারণে আমনের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ক্ষতি পোষাতে সিলেটে পরমাণু কৃষি গবেষণার উদ্ভাবিত ‘বিনা ধান সেভেন’ চাষের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। ৫৭ বা ৫৮ জাতের ধান লাগানোরও পরামর্শ আছে। সুনামগঞ্জে বিলম্বে ফলন হয় এমন প্রজাতির বিআর ২২, বিআর ২৩ ধান আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর কৃষক, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা এবং কৃষি ও ধান নিয়ে কাজ করছেন এমন একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুন মাসে আমন ধানের চারা করার সময় থাকলেও সিলেটে বন্যার কারণে এক মাসের বেশি দেরিতেও অধিকাংশ জায়গায় বীজতলা তৈরির কাজই শুরুই করা হয়নি। অনেক স্থানে বন্যার পানি থাকায় কত দিন পর বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করা যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। বন্যায় বীজ নষ্ট হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে কৃষকের হাতে বীজ নেই। টাকা দিয়েও পাচ্ছেন না ভালো মানের বীজ। অন্যদিকে বেশি দেরিতে আমন চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৫০০ কেজি ধান কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। সঙ্গে পরবর্তী মৌসুমের বোরো ফলনও ঝুঁকিতে পড়বে।
চলতি পথে বালাগঞ্জের এক কৃষক বলেন, বন্যায় তাঁর সংগ্রহের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে এবার আমন চাষ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এখন জমিতে ধান চাষের জন্য যে পরিমাণ বীজ প্রয়োজন তার এক ভাগও হাতে নেই। বন্যার পানিতে পলির সঙ্গে বালুমাটি উঠে যাওয়ায় জমি উৎপাদনক্ষমতা হারাতে বসেছে বলেও আশঙ্কা তার।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের এক কৃষক বলেন, বন্যার পানিতে ঘরের বীজধান, চালসহ সব কিছু ভেসে গেছে। এখন নতুন করে বীজধান ক্রয় করতে হবে। তারপর আমন ধানের বীজতলা তৈরি করে আমন ধান রোপণ করতে হবে। সময়ও দ্রæত ফুরিয়ে আসছে। তাই দ্বিধাদ্ব›েদ্বর মধ্যে আছি। অন্য বছর আষাঢ় মাসের শেষ দিকে বীজতলা থেকে ধানের জালা তুলে রোপণ করে ফেলতাম। এ বছর এখনো বীজতলাই তৈরি করতে পারিনি। ’
সুনামগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ৮১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আমনের বীজতলা তৈরির শেষ সময়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বীজতলা তৈরি করতে হয়। কিন্তু এখনো আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে থাকায় বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছেনা।
সিলেট জেলায় মোট আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরের কাছাকাছি। এর মধ্যে উফশী ও স্থানীয় জাতের আমন রয়েছে। তবে বন্যায় এবার এই লক্ষমাত্রা মারাত্মক হোঁচট খেয়েছে। এখনো ৯০ ভাগ আমনের আবাদ হয়নি। তৈরি হয়নি বীজতলা। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা আছে।