কমেছে ভোজ্যতেলের দাম : বাড়ছে মসুরির ডাল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২২, ১১:৩০:৪৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের বাজারে অবশেষে কমেছে ভোজ্যতেলের দাম। তবে বাড়ছে মসুরির ডালের দাম। বিশ্ববাজারে বেশ কমেছে ভোজ্যতেলের দাম। এর প্রভাবে গত দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারী বাজারেও কমেছে খোলা তেল সহ ভোজ্যতেলের দাম।
এদিকে পাইকারী বাজারে দাম কমায় খুচরাতেও পড়েছে এর প্রভাব। তবে খোলা তেলের দাম কমলেও নতুন করে বোতলজাত তেলের দাম এখনো কমানো হয়নি। ফলে খোলা তেলের দাম কমার সুফল পুরোপুরি পাচ্ছেন না গ্রাহক। কারণ বোতলজাত তেলের দাম বাড়া-কমার ওপর ভোক্তা পর্যায়ে নির্ভর করে খোলা তেলের দাম।
বৃহস্পতিবার নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মুদি দোকানে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিনের দাম ২ থেকে ৬ টাকা কমেছে। এছাড়াও পাম তেল ৫ থেকে ৭ টাকা কমেছে। খুচরায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬২ থেকে ১৬৪ টাকা, যা আগে ১৬৪ থেকে ১৭০ টাকা ছিল। অপরদিকে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, যা আগে ছিল ১২৫ থেকে ১৩২ টাকা।
সুবিদবাজারের মুদি দোকানি শাহীন আহমদ বলেন, পাইকারিতে দাম কমার কারণে এখন খুচরায় খোলা তেলের দাম কমছে। তবে বোতলজাত তেলের দাম না কমায় খুচরায় খোলা তেলের দাম কমার গতি কম। খুচরা বাজারে খোলা তেলের দাম নির্ভর করে বোতলজাত তেলের দাম বাড়া-কমার ওপর। বোতলজাত তেলের দাম বাড়লে খোলা তেলের দাম এমনিতেই বেড়ে যায়, কমলে কমে যায়।
অন্যদিকে কালিঘাটের বাজারের একজন তেল ব্যবসায়ী বলেন, সয়াবিনের চেয়ে পাম তেলের দাম দ্রুত কমেছে। মাসের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। যেখানে সয়াবিন সে তুলনায় অর্ধেকও কমেনি।
বোতলজাত তেলের দাম সরকারের সঙ্গে বসে নির্ধারণ করে দেয় তেল পরিশোধনকারী মিলগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সবশেষ গত ১৭ জুলাই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে সংগঠনটি।
সরকার নির্ধারিত এ দাম ১৮ জুলাই থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন দরের তেল বাজারে ছাড়তে গড়িমসি করে কোম্পানিগুলো। সে কারণে আগের বাড়তি দরেই তেল বিক্রি হয়েছে বেশ কিছুদিন।
এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্য বলছে, বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং পাম তেলের দাম ২ শতাংশ কমেছে। তবে বছরের ব্যবধানে বর্তমানে ভোজ্যতেলের দাম ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ বেশি এখনো।
এদিকে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও বাজারে বেড়েছে মসুরির ডালের দাম। নগরীর বিভিন্ন দোকানে এক কেজি সরু দানার মসুরির ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। যা গত এক মাসে আগেও ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। দোকানীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ডালের দাম বেড়ে গেছে। তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। কিন্তু ক্রেতারা জানান, একবার কোনো জিনিসের দাম বাড়ালে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের বাজারে তা আর কমে না।
বাজারসংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি জানায়, বিশ্ববাজারে কোনো পণ্যের দাম কমলেও দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়তে সময় লাগে। এর জবাবে ভোক্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলে তার প্রভাব পড়তে যেমন সময় লাগে, একই অবস্থা হওয়া উচিত দাম বাড়লেও। কিন্তু সেক্ষেত্রে সেটা হয় না। একবার দাম বাড়ালে ব্যবসায়ীরা আর দাম কমাতে চান না। অথচ বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে রাতারাতি দেশীয় বাজারে বেড়ে যায় প্রণ্যর দাম।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ মূলত মসুর ডাল আমদানি করে অস্ট্রেলিয়া থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলেও বর্তমানে তা আবার কমতে শুরু করেছে। আগে প্রতি টন মসুর ডাল আমদানি হতো ৯২০ ডলারে। বর্তমানে সে ডালের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮০ ডলার। অথচ, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও এর প্রভাব পড়েনি আমাদের পাইকারি বা খুচরা
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমেছে, এটা ঠিক। কিন্তু দেশীয় বাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে অনেকটাই বেড়ে গেছে আমদানি খরচ।