পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময়!
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২২, ২:১৫:১২ অপরাহ্ন
নিজাম উদ্দিন সালেহ :
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষভাবে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা সরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি’।
লক্ষণীয় যে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ করেন মন্ত্রীবর্গসহ দেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ। ক্ষমতা গ্রহণের আগে তারা এ ধরনের শপথ করেন। শপথকালে তারা সংবিধানকে সমুন্নত রাখার ও সরকারী বিধি নিষেধ মেনে চলারও অঙ্গীকার করেন। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে আসীন থেকে নিজ দেশের সরকার প্রতিষ্ঠায় অন্য একটি দেশের কাছে সহযোগিতা চাওয়া কি সংবিধানের লংঘন এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়? একজন মন্ত্রী বা সরকারী কর্মচারী যখন নিজ দেশ ও জনগণের কল্যাণে গণতান্ত্রিক পন্থা অর্থাৎ জনগণের ম্যান্ডেট মেনে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা, সেখানে ভিন্ন একটি দেশের মর্জিমাফিক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা কি জনমত ও জনগণের অধিকারকে পদদলিত করার শামিল নয়? পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য বিস্মিত ও হতবাক হওয়ার মতোই।
একথা সত্য যে, বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর ও বৃহৎ দেশ প্রায়ই অন্যান্য ক্ষুদ্র ও তুলনামূলক দুর্বল দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে ছোট দেশগুলোকে। এক্ষেত্রে ঐসব ক্ষুদ্র ও দুর্বল দেশগুলোর দুর্বল ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং অনেক সময় ঐসব দেশের ক্ষমতাসীন মহলের ব্যর্থতাও বিশেষভাবে দায়ী। এমনকি ক্ষমতাসীন শাসক বা সরকারের দেশ বিরোধী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণে সংশ্লিষ্ট দেশকে তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারানোর ঘটনাও ইতিহাসে বিদ্যমান। ভারতের প্রতিবেশী ক্ষুদ্র দেশ সিকিমও একইভাবে গ্রাস হয়েছিলো। ক্ষমতাসীন শাসক লেন্দুপ দর্জির বিশ্বাসঘাতকতায় সিকিম হারায় তার স্বাধীনতা। একই ধারায় মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় পলাশির আম্রকাননে। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনগণের স্বাধীনতার আশাও পদদলিত হয় রাজ্যের রাজার বিশ্বাসঘাতকতায়। তাই ক্ষুদ্র প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশগুলোকেও সব সময়ই তটস্থ ও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। প্রতিবেশী নেপাল, ভূটান ইত্যাদি দেশের সাথে ভারতের শীতল সম্পর্ক। পাকিস্তানের সাথে ভারতের অহি-নকুল সম্পর্ক। সর্বোপরি ভারত তার প্রতিবেশীদের কাছেই প্রকৃত বন্ধুসুলভ হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি। তাই বাংলাদেশের জনগণ স্বাভাবিকভাবেই তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে প্রতিবেশীকে সন্দেহের চোখে দেখাটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের এ ধরণের বক্তব্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রীতিমতো ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে সংশয় দেখা দিতে পারে। এতে এদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আশা ভরসা যে তিরোহিত বা হারিয়ে যাবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
গত এক যুগেরও বেশী সময় যাবৎ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আছে। তাদের এই ক্ষমতায় থাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে বিরোধী দলগুলোর মাঝে। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষসহ গোটা বিশ্বের সকল দেশ চায় এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও বৈধ পন্থায় হোক। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপরোক্ত বক্তব্য বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে মারাত্মক অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের জনগণের সহায়তা না চেয়ে একটি প্রতিবেশী দেশের সরকারের সাহায্য কামনা ও প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সচেতন দেশপ্রেমিক মানুষ উদ্বিগ্ন ও শংকিত। এ ধরনের বক্তব্য যখন সরকারের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর তখন কে দূর করতে পারে জনগণের এই উদ্বেগ ও আশংকা এমন প্রশ্ন এখন সবখানে।