উন্নয়ন যেনো প্রহসন না হয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৬:৩৫ অপরাহ্ন
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণের জন্য নানা প্রকল্প গ্রহণের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে মিডিয়াগুলোতে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল বা সুড়ঙ্গ সড়ক প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পথে। এসব প্রকল্পের পেছনে ব্যয় হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই উচ্চাভিলাসী এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এসব প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এগুলো নিঃসন্দেহে উন্নয়নমূলক কাজ। কিন্তু একটি হতদরিদ্র পরিবার যখন অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে তখন তার কাঁচা ঘর মেরামত করে দেয়ার পরিবর্তে প্রথমে তার খাদ্যাভাব দূর করার চেষ্টা করা উচিত। এই পরিবারের প্রকৃত উন্নয়ন চাইলে তাকে সহায়তার ক্ষেত্রে প্রায়োরিটি বা অগ্রাধিকারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এখানে এই দরিদ্র পরিবারের উন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন অন্ন। বাসস্থান পরের বিষয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা যে পর্যায়ে এবং খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের ফলে যেভাবে তাদের বিপর্যস্ত দশা এমন অবস্থায় তাদের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ও সর্বাগ্রে প্রয়োজন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় ও ক্রয়সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা। বিগত করোনা মহামারির সময় এদেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যায়। লাখ লাখ মানুষ কর্মহারা হয়। অনেকের আয় কমে যায়। কিন্তু দেশে বিদ্যমান কয়েক কোটি বেকার মানুষসহ করোনাকালে বেকার বা কর্মহীন হওয়া বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য তেমন কোন প্রকল্প বা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সরকারকে। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা বার বার তাগিদ ও পরামর্শ দিলেও এদিকে কর্ণপাত করা হয়নি। বরং বিভিন্ন সেতু টানেল মেট্রোরেল, বন্দর ইত্যাদি প্রকল্পের পেছনে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু সরকার বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নিয়ে পড়ে আছে। সাধারণ মানুষের আর্থিক সংকটকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার কোটি টাকার যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নে ব্রীজ রাস্তার কাজ গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দেশের ৯০ ভাগ মানুষকে খাদ্যাভাব ও চরম আর্থিক দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে এসব টানেল, রাস্তা, সেতু কিংবা রেল নির্মাণ কি আদৌ যুক্তিসম্মত ও মানবিক? এ প্রশ্ন এখন জাগছে দেশের সচেতন ও বিবেকবান মানুষের মাঝে।
আমরা রাস্তাঘাট, সেতু, টানেল ইত্যাদি চাই। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এসব অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। কিন্তু যে মানুষের জন্য এসব রাস্তা, সেতু ও টানেল, সেই জনগণের জীবনযাত্রার মান যদি অর্থনৈতিক কারণে নিচের দিকে নেমে যায় এবং ভবিষ্যত হয়ে পড়ে অনিশ্চিত, তবে এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকৃত উন্নয়ন না হয়ে উন্নয়নের নামে প্রহসনে পরিণত হতে পারে। সিলেটে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে একটির বয়স ২৮ এবং অপরটির বয়স ৩৬ বছর। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় এসব কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বিদ্যুতের গড় দাম ওপর প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রগুলো কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এ ধরণের আরো অনেকগুলো পুরোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে দেশে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে, মূল্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। কিন্তু এগুলো প্রতিস্থাপনের কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না সরকারকে। বরং বিদ্যুতের মতো উৎপাদনশীল জরুরি বিষয়কে পাশ কাটিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে। এ ধরণের প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।