নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১২:২২:৩৭ অপরাহ্ন
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৩ হাজার ৬৭ জন নারী ও কন্যা ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বেশী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। নারী অধিকার সংগঠন জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই দেশে ৩৭১ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬২ জন। এদের ২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ৫ জন কন্যাসহ ১০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। নারী ও কন্যা পাচারের ঘটনা ঘটেছে ৬৩ টি এর মধ্যে ১৮ জন কন্যা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৩০ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৯ নারী। আর এ কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন এছাড়া ১৪১ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নোয়াখালি জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশী।
লক্ষণীয় যে, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড হওয়া সত্বেও ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে শুধু ১ হাজার ১১৭ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এর আগের বছর ৬২৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসী ফোরাম-এর প্রতিবেদন অনুসারে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কন্যা শিশু ধর্ষণ ৭৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ২০২০ সালে ধর্ষণের ঘটনা ও এর ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে দেশে বিদ্যমান আইন সংশোধনের দাবি ওঠে। তখন নারী নির্যাতন তথা নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইনও পাশ হয়।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ধর্ষণের অপরাধ দমনের জন্য ব্রিটিশরা ১৮৬০ সালেই দেশে আইন করে রেখে গেছে। ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের ধর্ষণ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোকে পরবর্তী সময়ে আরো কঠোর করে সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু এই কঠোরতা সত্বেও এই জঘন্য অপরাধ কমা দূরে থাক, আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে সচেতন মহলের অভিমত হচ্ছে, অতীতে ধর্ষণের আইন ও শাস্তি এতো কঠোর না থাকলেও প্রয়োগ হতো যথাযথভাবে। ফলে এ ধরণের অপরাধ সংঘটনের হার ছিলো অনেক কম। কিন্তু বর্তমানে আইন ও সাজা কঠোর হলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে দুর্বলতা। এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায়, অপরাধীরা এই জঘন্য অপরাধ সংঘটনে বেপরোয়া মনোভাব প্রদর্শন করছে। অপরাধ করেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। এদেশে ৫ বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশুরাও নিরাপদ নয়। অনেক সময় স্থানীয়ভাবে নারী নির্যাতনের বিশেষভাবে নারী ধর্ষণ হলে সালিশ মীমাংসার ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে সাধারণত: নারীকেই অপরাধী বা দুশ্চরিত্রা হিসেবে সাব্যস্ত করতে দেখা যায়। এসব সালিশের মাধ্যমে প্রতিকারের নামে নারীকে মূলত: দ্বিতীয়বারের মতো নির্যাতন করা হয়। এটাও এদেশে নারী নির্যাতনে অপরাধীদের উৎসাহিত করছে।
এ অবস্থায় সচেতন মহলের অভিমত হচ্ছে, নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং নির্যাতন প্রতিরোধে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় ধর্ষণের মতো অপরাধ এদেশে মহামারির মতো বিস্তৃত হতে পারে আগামী দিনগুলোতে।