জাহাজ শিল্পে জনশক্তি রফতানি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১২:১৬:২৭ অপরাহ্ন
সম্প্রতি জাতীয় মিডিয়া ‘দ্য বিনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এ ‘রাশিয়ান শীপ বিল্ডার্স হায়ারিং বাংলাদেশীজ ফর দ্য ফার্স্ট টাইম’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার জাহাজ প্রস্তুতকারী শিল্প বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি অর্থাৎ শ্রমিক কর্মী আমদানি করতে চাইছে। রাশিয়ার কয়েকটি কোম্পানী এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও সেবা লিমিটেড (বোয়েলস্) এর সাথে যোগাযোগ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, রাশিয়ার বেশ কয়েকটি কোম্পানী প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ ১০০ কর্মী চেয়েছে বাংলাদেশের কাছে। কোম্পানীগুলো প্রধানত: স্কাফোল্ডিং (বিল্ডার), হাল ফিটার, মেরিন মেশিন ফিটার, মেরিন পাইপ ফিটার এবং ওয়েল্ডিংয়ের কাজে শ্রমিক নিতে আগ্রহী। ধারণা করা হচ্ছে তাদের এই চাহিদা আগামী দিনগুলোতে আরো বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও সেবা লিমিটেডের এমডি ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, একবার রাশিয়ার শীপ বিল্ডিং মার্কেটে প্রবেশ করতে পারলে, অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং আমরা সে চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের শীপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অর্থাৎ জাহাজ নির্মাণ শিল্পে আমাদের অনেক লোক কাজ করছে। এছাড়া দেশের মেরিন টেকনোলজী সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক দক্ষ লোক বেরিয়ে আসছে। বাংলাদেশে মোট ৬টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট রয়েছে। রাশিয়ায় কর্মসংস্থান হলে জাহাজ শিল্পের এ ধরনের শ্রমিকদের মাসিক বেতন ৬৫ হাজার টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকা হবে। এছাড়া বিমানভাড়া, পরিবহন খরচ বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা করবে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। গত সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতকে এ বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়। ভøাদিভস্টক নগরীর গভর্ণর এ বিষয়ে কথা বলেন রাষ্ট্রদূতের সাথে।
লক্ষণীয় যে, ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরের শীপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে ৬০ হাজারেরও বেশী বাংলাদেশী শ্রমিক দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করছে। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ২০টি আন্তর্জাতিক এবং ১০০টি স্থানীয় শীপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ড রয়েছে। এগুলোতে ইতোমধ্যে প্রায় একশ’ জাহাজ তৈরী হয়েছে। এই শ্রমনির্ভর শিল্পে দেড় লাখেরও বেশী বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছে। এছাড়া ২০ লাখেরও বেশী লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িত।
জানা গেছে, জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাংলাদেশকে বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা যোগান দিয়ে থাকে। এই অংক আগামী ২০৪১ সালে ১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের জাহাজ শিল্পকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে, এতে দেশে এই শিল্পের জন্য দক্ষ শ্রমিক ও কর্মী শ্রেণী গড়ে ওঠছে। তারা শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, বিদেশে গিয়েও এই শিল্পে অবদান রাখার পাশাপাশি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে সক্ষম। তাই বাংলাদেশের মেরিন ইন্সটিটিউটগুলোতে আরো বেশী সংখ্যক শ্রমিক কর্মীকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানে এগিয়ে আসতে হবে। একই সাথে এদেশের তরুণ ও যুবকদের জেনারেল লাইনে পড়াশোনার চেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক এই খাতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।