অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং খাতে সমস্যা দেখছেন না
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৫:১৬ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছেÑআমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো? এটা কি হয়? এসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন হাইকোর্ট। দুদকের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট আরো বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যা করছে, তাতে মনে হয় আমরা নাটক দেখছি। হাততালি দেওয়া ছাড়া আর কী করার আছে, না হয় বসে থাকতে হবে।
বেসিক ব্যাংকের অর্থ পাচারের মামলার আসামী জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানিতে বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত সোমবার এ মন্তব্য করেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে দায়ের হওয়া ৫৬ দুর্নীতি মামলার তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে না পারলে দুদকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।
উপরের ঘটনাটি থেকে দেশের ব্যাংকের অর্থ নিয়ে কেলেঙ্কারি এবং এর বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। একদিকে ব্যাংকিং খাতে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ যখন নিদারুনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, তখন অর্থমন্ত্রীর একটি বক্তব্য জনমনে যুগপৎ বিস্ময় ও হতাশা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছেন, ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ? তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ লিখিত দিয়ে যান, আমরা খতিয়ে দেখবো। লক্ষণীয় যে, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি হচ্ছে, প্রচারিত হচ্ছে সংবাদ ও প্রতিবেদন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্ণরসহ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ তাদের বক্তব্য ও সাক্ষাতকারে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে অনেক আলোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। তুলে ধরেছেন দুর্নীতির নানা দিক। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য যেনো সহসা ঘুম থেকে জেগে ওঠা মানুষের বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের মতো। তার বক্তব্য থেকে ধারণা হচ্ছে তিনি এতো সব লেখালেখি বক্তব্য ও বিশ্লেষণের কিছুই পড়েননি বা শুনেননি। এখন সাংবাদিকদের বলছেন, ব্যাংকিং খাতে কোথায় দুর্নীতি। থাকলে লিখিতভাবে দিয়ে যান। খতিয়ে দেখবো।
একটি দেশের অর্থমন্ত্রী যখন দেশের ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে দেশের অর্থনীতিবিদগণসহ সচেতন লোকজনের দৃষ্টিভঙ্গী, মতামত ও মন্তব্যের ব্যাপারে এতোটা নির্বিকার ও উদাসীন, তখন তার কাছ থেকে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক কিছু কি আশা করা যায়, এমন প্রশ্ন এখন সচেতন মহলের। অর্থমন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনকি দেশ বিেেশর গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বৈঠক ও কনফারেন্সেও তিনি প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। অথচ বেতন ভাতাসহ সকল রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিয়মিত গ্রহণ করছেন।
বলা বাহুল্য, দেশের অর্থনৈতিক সংকট এখন দেশে বিদেশে তুমুল আলোচনার বিষয়। ইতোমধ্যে রিজার্ভ নিয়ে জনমনে সন্দেহ আতংকে রূপ নিয়েছে। কুড়িটি ব্যাংক প্রায় দেউলিয়া। জনগণ শংকা থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। শুধু নভেম্বরেই ব্যাংক থেকে দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। অবস্থা যখন এমন তখন দেশের উচ্চ আদালত এ বিষয়ে চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে কিন্তু বিস্ময়করভাবে অর্থমন্ত্রী প্রায় নিরব। এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কী ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা বলছেন না। এর পরিবর্তে সাংবাদিকদের কাছে বলছেন, ব্যাংকিং খাতে কোন সমস্যা নেই। যদি সাংবাদিকরা কোন খারাপ কিছু দেখে থাকেন, তবে তারা যেনো লিখে তার কাছে দিয়ে যান। এসব দেখে ও শুনে সাধারণ মানুষ বিস্মিত, হতবাক।