বড়লেখায় জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধনে ভোগান্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:০৩:৩৮ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি:
বড়লেখায় জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে গিয়ে পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের নাগরিকদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে সংশোধনের জন্য আবেদন করেও যথাসময়ে তারা জন্মনিবন্ধন সনদ পাচ্ছেন না। যার কারণে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন আটকে পড়ে। ফলে দিনের পর দিন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিতে হচ্ছে। এদিকে, যারা মোটা অংকের টাকা দিচ্ছেন তাদের জন্মসনদ দ্রুত সংশোধন করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি বড়লেখা পৌরসভা, বড়লেখা সদর, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ও দক্ষিণভাগ উত্তর এবং সুজানগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন গিয়ে দেখা গেছে, জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য অনেকে পৌরসভা ও ইউনিয়ন অফিসে এসেছেন। তাদের কেউ নতুন জন্মনিবন্ধন নিতে এসেছেন। কেউ বা সংশোধনীর জন্য। সংশোধনী করতে আসা নাগরিকদের কারও সন্তানের নামে ভুল, কারও মা-বাবার নামে ভুল, কারও লিঙ্গ পরিচয়ে ভুল রয়েছে। এসময় অনেকে অভিযোগ করেন তারা প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে সংশোধনের জন্য আবেদন করেও জন্মসনদ পাননি।
সদর ইউনিয়নে হিনাইনগর গ্রামের খন্দকার সাহেদ হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ভাতিজির জন্মসনদে নামের ভুল সংশোধনের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করেছি। পরে সেটির কপি ইউনিয়নে জমা দিয়েছি। এরপর থেকে অন্তত ৭ দিন ইউনিয়নে গিয়েছি। ইউনিয়নে যাওয়ার পর দায়িত্বশীলরা বলেন ইউএনও অফিসে যেতে। সেখানে দুইদিন গিয়েও কোন কাজ হয়নি।
জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে গিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা স¤পর্কে দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির আরেঙ্গাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মারুফ হোসাইন বলেন, আমার ভাতিজা-ভাতিজির জন্মসনদে নামে ভুল থাকায় তা সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করে একাধিকবার ইউনিয়ন ও ইউএনও অফিসে গিয়েছি। পরে প্রায় ৬ মাস পর তা সংশোধন হয়েছে। উদ্যোক্তারা যাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন তাদের কাজ দ্রুত করে দিচ্ছে-এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আরেঙ্গাবাদ গ্রামের আমার খালাতো ভাই আশুকুর রহমানের কাছ থেকে তার ছেলে-মেয়ের জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধনের জন্য ৬ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আমার এক ভাতিজার জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে গিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কারা টাকা নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউনিয়নের দায়িত্বশীলরা নিয়েছেন। এরকম অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। আমি একটু রাগারাগি করায় তারা আমার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে পারেনি।’
এদিকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পৌরসভার মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তারা। তারা জানিয়েছেন, জন্মনিবন্ধন সংশোধনের আবেদনের ক্ষেত্রে তারা নির্ধারিত ফি নেন। এর বাইরে কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। ইউনিয়নের নাগরিকদের আবেদন ইউএনও অফিস থেকে অনুমোদন হয়। তা যাচাই-বাছাই হতে একটু সময় লাগছে। আর বড়লেখা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পৌরসভার নাগরিকদের জন্মসনদ সংশোধনের আবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে অনুমোদন হয়।
ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, আগের ইউএনও বদলি হওয়া আর নতুন ইউএনও হিসাবে আমার যোগদানের মাঝখানে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের অনেক আবেদন জমা পড়েছে। এজন্য একটু সময় লাগছে। এরপরও যাদের খুব বেশি ইমার্জেন্সি তিনি তার ইউপির চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানাবেন। চেয়ারম্যান আমাদের কাছে তাকে পাঠিয়ে দিলে আমরা তা সাথে সাথে করে দেব। টাকা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়নে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে কারও কোন অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।