রাজশাহীতেও জনস্রোত : সরকার দু:স্বপ্ন দেখছে : মির্জা ফখরুল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:০৮:৩৫ অপরাহ্ন
জালালালাবাদ রিপোর্ট : ধর্মঘট, ইন্টারনেট বন্ধ, পুলিশের নানা শর্তসহ বাধার বহুমাত্রিক দেয়াল ডিঙিয়ে বিএনপির রাজশাহীর গণমাবেশেও দেখা গেলো মানুষের উত্তাল ঢেউ। সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন বাহনে এবং বহু পথ হেঁটে মানুষ যোগ দেন সমাবেশে। সমাবেশ ছিলো ৩ ঘন্টার। কিন্তু পুরো সমাবেশ যেন পরিণত হয় তিন দিনের।
অন্য বিভাগের মতো রাজশাহীতেও একই পন্থা অবলম্বন করা হয়। শনিবার সকাল ৯টা থেকে পুরো নগরীতে বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট সেবা। এ ছাড়া সমাবেশস্থলে দেয়া হয়নি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও। ফলে বিপাকে পড়েন নেতা-কর্মীরা। বেশী বিপাকে পড়েন সমাবেশ কাভার করতে আসা সংবাদকর্মীরা।
শত শত সংবাদকর্মী লাইভ ডিভাইস মাঠে নিয়ে এসেও সরাসরি প্রচার করতে পারেননি। এমনকি মোবাইল থেকেও সংবাদ পাঠাতে পারেননি অফিসে। ফলে ছবি কিংবা সংবাদ পাঠাতে সমাবেশস্থল থেকে বেরিয়ে নিজ কার্যালয়ে গিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আশ্রয় নিতে হয়েছে। এমন অনেক সংবাদকর্মীকে পাওয়া গেছে যারা বেশ কয়েক দফায় সমাবেশ স্থল ও অফিসে ভিড় ঠেলে গেছেন আবার এসেছেন শুধু ছবি ও নিউজ পাঠাতে।
এমন ঘটনা ঘটতে পারে বিষয়টি আগে থেকে আঁচ করতে পেরে স্থানীয় বিএনপি নেতারা গণমাধ্যম কর্মীদের কথা দিয়েছিলেন যে মাঠে তাদের কাজের সুবিধার্থে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু পুলিশ ১ দিন আগে থেকেই মাঠে কোনো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ নিতে দেয়নি। বিএনপির মাদরাসা মাঠ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটি শর্ত ছিল যে, মাঠে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে পারবে না।
এত বাধার পরও রাজশাহীর সমাবেশ রুপ নিলো জনসমুদ্রে। এই সমাবেশের উত্তাল ঢেউ ঢাকায় পৌঁছানোর ডাক দেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, আজ চাল নেই, তেল নেই, বাঁচার অধিকার নেই। এই মুহূর্তে পরিবর্তন সময়ের অপরিহার্য দাবী।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের বিএনপির সমাবেশ নিয়ে সরকার ভয় পেয়েছে। তাদের ঘুম হারাম হয়েছে। তারা দু:স্বপ্ন দেখছে। তারা নিজেরাই বলাবলি করছে, সেদিন নাকি তাদের তখতে তাজ উল্টে যাবে। তাদের নিজেদের ওপরই আস্থা নাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ তারিখে বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায়। সেখানে বিএনপি বিভাগীয়, জাতীয় অনেক সমাবেশ করেছে। সেখানে লাখ লাখ মানুষ হয়েছে। কোনো দিন কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাহলে এখন কেন সমস্যার কথা আসছে?
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জঙ্গি আক্রমণের ধুয়া তুলেছে। যখন সরকারের দরকার হয়-এবার বিএনপিকে ধরতে হবে, তখন তারা জঙ্গি তৈরি করে। নিজেরা বাস পুড়িয়ে, ককটেল মেরে বলে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করছে।
সরকার ভয়ে আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, চোরের মন পুলিশ পুলিশ এদের অবস্থা এ রকম। কিছু হলেই দুঃস্বপ্ন দেখে। বিএনপি আইলো, বিএনপি আইলো, তারেক রহমান আইলো, তারেক রহমান আইলো। তিনি বলেন, বিএনপির যে আন্দোলন, তা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য নয়, তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য নয়, বা তাঁদের দলের নেতাদের মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, এ আন্দোলন ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারা একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তারপর নতুন নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে সংসদ গঠিত হবে। এখন যেসব দল আন্দোলনে আছে তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাদের রুখে দিতে না পারলে সব অর্জন শেষ হয়ে যাবে। দুর্বার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, নিজেদের পকেট ভারী করে জনগণকে গরিবে রূপান্তরিত করছে এ সরকার। পরিকল্পিতভাবে আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলার মাটিতে আর কোনো নির্বাচন হবে না।
সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে শহরের মাদ্রাসা মাঠে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকে গণসমাবেশে আসা নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করতে গান পরিবেশন করা হয়। জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা ইথুন বাবুসহ জেলা ও কেন্দ্রীয় জাসাসের নেতৃবৃন্দ নানা ধরনের সংগীত পরিবেশন করেন। রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশস্থলের আশপাশের সব রাস্তায় ছিলো বিএনপি নেতাকর্মীর মিছিল। বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে দলে দলে সমাবেশস্থলে হাজির হন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে ছিলো জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন এবং ধানের শীষ। সমাবেশে সাত-আট লক্ষাধিক লোকসমাগম হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করছেন। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে লোকসমাগম কত হয়েছে-তা নির্ধারিত করে বলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লার পর শনিবার রাজশাহীতে গণসমাবেশ করলো বিএনপি। এটি ছিলো বিএনপির নবম বিভাগীয় গণসমাবেশ। সর্বশেষ সমাবেশ হবে ঢাকায়। যে সমাবেশ ঘিরে এখন বিপরীতমুখী অবস্থানে সরকার ও বিএনপি।