সিলেটে প্রতিবন্ধী দিবস পালিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ৯:২১:২৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হয়েছে ৩১তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী ও ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ : প্রবেশগম্য ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণে উদ্ভাবনের ভূমিকা’।
প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগীতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকান্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই এই দিবসটির সূচনা।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হলো বিশ্বের বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এবং এই জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করে। অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, বর্তমান পৃথিবীতে এক বিলিয়নের বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ এবং এর মধ্যে ৭৮৫ মিলিয়নের বয়স ১৫-৫৯ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ তারা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অংশ।
সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অর্থাৎ প্রতি দশ জনে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।
একটি জরিপে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে ৪০.৫৫ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা এবং ২৪.৩৬ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সিলেট বিভাগে এই পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক, কারণ সিলেটের ৬৫.৩৯ শতাংশ শিশু প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগ এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে। এই বিভাগে ২৯.২৭ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধিদের মধ্যে সবাই জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী নয়। অনেকেই সড়ক দুর্ঘটনা বা ইনজুরির কারণে প্রতিবন্ধী।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে শনিবার সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি বর্ণিল র্যালি বের হয়। র্যালিটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে সিলেটের বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
পরে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বাদ দিয়ে সুন্দর সমাজ কল্পনা করা যায় না। তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখালে দুনিয়া ও পরকালের মুক্তি সুনিশ্চিত। সরকারের পাশাপাশি সমাজেরই সবারই উচিত প্রতিবন্ধীদের মৌলিক অধিকারগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়নে সম্মিলিত ভাবে করতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই প্রথম এই দিবসটি পালন করে প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে। তাদের জন্য ভাতা প্রবর্তন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানে সরকার কাজ করে চলেছে।
সমাজসেবা অফিসার সানজিদা সুলতানা ও লুৎফুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহরিয়ার হোসেন সালেহ, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক এমপি সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সিনিয়র সাংবাদিক আল আজাদ, কলামিস্ট সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী, গ্রামীণ জনকল্যাণ সংসদের নির্বাহী পরিচালক জামিল চৌধুরী।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক নিবাশ রঞ্জন দাশ। বক্তব্য রাখেন-রহমানীয়া প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আতাউর রহমান খান সামছু, গ্রীন ডিসএবল্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বায়েজিদ খান, সিলেট ডিফারেন্টলি এবল্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান হাসিব রাজা চৌধুরী।
শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজসেবা অফিসার খলিলুর রহমান, গীতা পাঠ করেন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র সিলেট এর প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ সংকর রায়। ইশারা ভাষা উপস্থাপন করেন সরকারী বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সিলেট এর শরীর চর্চা শিক্ষক আবু তাহের মো. ইবনে সাঈম খান।