বালাগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২০:৪৭ অপরাহ্ন
বালাগঞ্জ সংবাদদাতা: আজ ৭ ডিসেম্বর বালাগঞ্জ মুক্ত দিবস। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি, বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি আতাউল ওসমানীর পৈতৃক ভূমি বালাগঞ্জ উপজেলা ৭ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামাল স্বাধীন বালাগঞ্জে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাতাছড়া থেকে কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা বালাগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামালের নেতৃত্বে এ বাহিনীর অন্যান্য সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন মুছব্বির বেগ, শফিকুর রহমান, মনির উদ্দিন, ধীরেন্দ্র কুমার দে, নীহারেন্দু ধর, আব্দুল খালিক, জবেদ আলী, সিকন্দর আলী, আমান উদ্দিন, লাল মিয়া, মনির উদ্দিন আহমদ, মজির উদ্দিন আহমদ, মো. সমুজ আলী, আব্দুল বারী প্রমুখ।
এদের মধ্যে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা সদরে থেকে যান। তাদের দলে থাকা কয়েকজন মুত্তিযোদ্ধা ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর ফেঞ্চুগঞ্জ থানার মাইজগাঁও এলাকার একটি বাড়ীতে ওঠেন। সেখান থেকে ওই দিন রাত ১২টায় রওয়ানা হয়ে তারা রাত ২টার দিকে ইলাশপুর রেল সেতুর কাছে অবস্থান নেন। পরদিন ভোরে একদল পাক সেনা সিলেট থেকে ফেঞ্চুগঞ্জের দিকে অগ্রসর হলে মুক্তিবাহিনীর সাথে মুখোমুখি হয়ে প্রায় আধা ঘন্টা যুদ্ধ হয়। পাকিস্থানী সৈন্যরা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে পরাস্থ হয়ে ২টি এসকেএস রাইফেল ও বেশ কিছু গোলাবারুদ ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা ইলাশপুর সেতু অতিক্রম করেন।
এ সময় রাজনগরে থাকা অনান্য মুত্তিযোদ্ধারা সেখানে এসে পৌঁছায়। এতে দলের মনোবল আরো বেড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ইলাশপুর সেতুর অবস্থান থেকে ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে রওয়ানা হয়ে সন্ধ্যা ৭টার সময় প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বর্তমান বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হন। সেখানে অবস্থান করে শুরু হয় তথ্য সংগ্রহের কাজ। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে বালাগঞ্জ থানায় পাক হানাদার বাহিনী নেই, তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে একদল বাঙালি পুলিশ রয়েছে। রাতেই মুক্তিযোদ্ধারা থানা ভবনে অবস্থানকারী পুলিশ বাহিনীকে ঘেরাও করে ফেলেন।
৭ ডিসেম্বর সকালে বার্তা বাহক দুই জনকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আত্মসমর্পণের কথা জানানো হয়। পুলিশ বাহিনী তখন দুই ঘণ্টা সময় চায়। তখন মুক্তিযোদ্ধারা ঘোষণা করেন বড়জোর ১০ মিনিট সময় দেয়া যেতে পারে। অত:পর সিদ্ধান্ত হয় পাক হানাদারের দোসররা সকাল ৯টায় অস্ত্র সমর্পণ করবে। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পুলিশ বাহিনী থানা ভবনের মালখানায় অস্ত্র জমা দেন এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সকাল পৌণে ১০টায় মুক্তি বাহিনীর অধিনায়কের নিকট চাবি হস্থান্তর করেন।
সেদিন আত্মসমর্পণের পর উপজেলা সদরস্থ সাব-রেজিস্ট্রারী অফিস প্রাঙ্গণে মুক্তিকামী অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে। তারপর সকাল ১০টার সময় থানার সমুখস্থ প্রাঙ্গণে কুয়াশাঘন সকালে মাঠের এক পার্শ্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সারিবদ্ধ ভাবে লাইন করে অবস্থান গ্রহণ করেন। সবার হাতে অস্ত্র। এ সময় উৎসুক জনতা বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের অভিবাদন জানান এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামাল স্বাধীন বালাগঞ্জে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।