সিলেটে বিতর্ক পিছু ছাড়ছেনা পুলিশের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:২১:০৫ অপরাহ্ন
অপরাধে জড়ালে পুলিশ প্রশাসন দায়ভার নিবে না : এসএমপি কমিশনার
স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশ সদস্যদের কর্মকাণ্ডে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের। ব্ল্যাকমেইলিং থেকে শুরু করে নিজেদের মধ্যে মারামারি, মাদক সেবন বিক্রিসহ একের পর এক অনৈতিক কাজে জড়িয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। সর্বশেষ এক নায়েক নিজের শর্টগান দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়েছেন এএসআই’র। এর আগে মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠে। তারও আগে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কতিপয় পুলিশ সদস্য রায়হান নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়া ভোরে পথচারীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগও উঠে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।
২০২০ সালের শেষদিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ উত্তাল ছিলো পুরো সিলেট। এরপর সমালোচনার মুখে পড়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ। হত্যার প্রতিবাদে প্রতিদিন মিছিল, রাস্তা অবরোধ, পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। এ অবস্থায় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকে। এরপর কিছুদিন বিতর্কমুক্ত থাকলেও ফের বিশৃঙ্খলা আর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বিতর্কের চূড়ায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।
সম্প্রতি এক কলেজছাত্রকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন সদস্য। পরে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া গত শনিবার এসএমপির এক নায়েক নিজের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়েছেন এক এএসআইয়ের। এ ঘটনায় দু’জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দপ্তরের পিআইও শাখায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক আবু সায়েদের ছেলে সাইফুর রহমান আসাদ (১৮) সিলেট শহরতলির মেজরটিলা এলাকার বাসিন্দা। গত ১৩ অক্টোবর অনলাইনে নিজের পুরনো একটি মোবাইল ফোন ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেন আসাদ। সেই ফোন বিক্রির টাকা নিতে ওইদিন সন্ধ্যার পর এক বন্ধুকে সাথে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় যান তিনি। মোবাইল বিক্রির টাকা নিয়ে তারা দু’জনে যান শাহজালাল (রহ.) মাজার এলাকায়। সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ৩ পুলিশ সদস্য এসে আসাদ ও তার বন্ধুকে জাপটে ধরেন। তারা তাদের সাথে থাকা একটি ব্যাগ তল্লাশি করে ইয়াবা পেয়েছেন বলে দাবি করেন। তখন সাইফুর রহমান আসাদ এর প্রতিবাদ করে পুলিশে কর্মরত তার বাবার পরিচয়ও দেন। বিষয়টি তিনি তার বাবাকেও জানান। খবর পেয়ে শাহপরান থানায় কর্মরত এসআই জামাল ভুঁইয়া ঘটনাস্থলে যান। তিনি আসাদ ও তার বন্ধুকে কোতোয়ালী মডেল থানায় নিয়ে যান। সেখানে মুচলেকা রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে ওই কলেজছাত্রকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও পৌঁছায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসএমপি পুলিশ লাইনের এডিসি (ফোর্স) সালেহ আহমদকে ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি গত ২৪ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনের স্মারক এসএমপি-১৬০ /এডিসি (ফোর্স)। তদন্তে তিন কনস্টেবলের অপকর্মের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
এ তিন কনস্টেবল হলেন- মো. ঝুনু হোসেন জয় (বিপি-০১২০২৩৬৪২৪), ইমরান মিয়া (বিপি-০১২০২৩৫৫৪৭) ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (বিপি-০০২০২৩০৯৯৯)। এরা এসএমপির পুলিশ লাইনে কর্মরত। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, গত শনিবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনসে ঘটেছে বিস্ফোরক এক ঘটনা। সেদিন নায়েক পদমর্যাদার এক পুলিশ সদস্য তার নামে ইস্যুকৃত শটগান দিয়ে আঘাত করে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার এক সদস্যের মাথা ফাটিয়ে দেন। এ ঘটনায় রোববার এসএমপির উপ-কমিশনার (সদর ও প্রশাসন) মো. কামরুল আমীন স্বাক্ষরিত এক আদেশে ওই দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন, এএসআই মো. রুবেল মিয়া ও নায়েক প্রনজিত।
বরখাস্তের আদেশ সূত্রে জানা গেছে, এএসআই মো. রুবেল মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ লাইনসে স্ট্যান্ডবাই ডিউটি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে স্ট্যান্ডবাই পার্টি ফল-ইন করতে গিয়ে নায়েক প্রনজিতকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে স্ট্যান্ডবাই পার্টির ইনচার্জ মেজরকে জানান। তখন মেজর জানান, প্রনজিতকে এলপি গেটের পাশে দেখেছেন। পরে ইনচার্জ রুবেল মিয়া নায়েক প্রনজিতকে ডেকে আনার জন্য পাঠান নায়েক শরীফ মিয়াকে। প্রনজিত ফিরে স্ট্যান্ডবাই পার্টির ইনচার্জ রুবেল মিয়ার সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। তখন প্রনজিত তার নামে ইস্যুকৃত শটগান দিয়ে রুবেলের মাথায় আঘাত করেন। এতে তার মাথা ফেটে যায়। পরে তাকে সিলেট বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমন কর্মকা- কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে তাদের এহেন কর্মকা- বিভাগীয় নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থী, অপেশাদারত্ব, নৈতিক স্খলন তথা অসদাচরণের শামিল। তাই এসব কর্মকা-ের কারণে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ধারা-৩৯ (২) মোতাবেক, বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের বিধি ৭৩ এবং পিআরবি-৮৮০ প্রবিধান অনুযায়ী রুবেল মিয়া ও প্রনজিতকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
এসব প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদীপ দাস বলেন, ‘ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর যে ঘটনা, এটা অবশ্যই ঘৃণ্য কাজ। এ ব্যাপারে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে এরকম ঘটনা আর না ঘটে। আর পুলিশ লাইনসের ঘটনায়ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, কল্যাণসভাগুলোতে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করা হয়। যে কেউ এমন কাজে জড়াবে ছাড় দেয়া হবে না। কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধে জড়ালে সেটা তার ব্যক্তির দায়। পুলিশ প্রশাসন এ দায়ভার নিবে না।