রণক্ষেত্র নয়াপল্টন, উত্তপ্ত ঢাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ২:০৭:১৭ অপরাহ্ন
• গুলিতে নিহত ১, আহত শতাধিক
• রিজভী, আমান, এ্যানি, জুয়েলসহ আটক অসংখ্য
জালালাবাদ রিপোর্ট : ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে নয়াপল্টনে জড়ো হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ শর্টগানের গুলি, রাবার বুলেট এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে মকবুল হোসেন (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। আটক হয়েছেন রুহুল কবীর রিজভীসহ আরো শতাধিক নেতা-কর্মী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া নিহত মকবুলের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিহতের শরীরে শটগানের গুলির আঘাত ছিল। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে দুদিন ধরে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী। বুধবারও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। অপরদিকে সকাল থেকেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় পুলিশি অবস্থান জোরদার করা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় আরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বেলা ৩টার দিকে পুলিশ নেতা-কমীদের সরে যেতে বলে। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জবাব দেয়। শুরু হয় দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় স্পেশাল বাহিনী সোয়াতও।
এক পর্যায়ে নয়াপল্টন থেকে ফকিরাপুল মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের ছোড়া অসংখ্য টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে দলীয় কার্যালয় ও এর আশপাশ এলাকা। পুলিশের লাগাতার টিয়ার শেল, শর্ট গানের গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে টিকতে না পেরে পিছু হটেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। আশপাশের গলিতে অবস্থান নেন তারা। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে বেশকয়েকজন ছাত্রদল নেতা আহত হন। এক পর্যায়ে গলিতে গলিতে অভিযান চালায় পুলিশ। সন্দেহজনক যাকে পায় তাকেই ধরে নিয়ে যায়।
সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ। সেখান থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
তবে রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংঘর্ষের খবর পেয়ে নয়া পল্টনে ছুটে এলেও তাকে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। এ সময় কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। মির্জা ফখরুল কার্যালয়ের সামনে বসে পড়েন।
এসময় দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ন্যক্কারজনক হামলা। পুলিশ গেইট বন্ধ করে ভেতরে তল্লাশির নামে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। ভেতরে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এটা অসাংবিধানিক। মির্জা ফখরুল বলেন, একটা ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করতে পারি না, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
আটক হওয়ার আগে সংঘর্ষ চলার সময় রিজভী বলেন, নেতাকর্মীরা ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে পার্টি অফিসে এসেছিলেন। তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে পুলিশ। টিয়ার গ্যাসে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অনেকে। অনেক কর্মীকে আহত অবস্থায় আটক করে নিয়ে গেছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের এ গুলি চালানো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপি নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ করতে চায়। অন্যদিকে সরকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিতে নারাজ। নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের সামনে বিএনপিকে গণসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে গতকাল আবারো বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, আইন অমান্য করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে।