আরেকটি সেতু নির্মাণের হেতু কী?
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:০৯:৪৪ অপরাহ্ন
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, অর্থনীতিকে আরো চাঙ্গা করতে তৈরী হচ্ছে বাংলাদেশ। আগে থেকেই দু’টি সেতু আছে মেঘনা নদীর ওপর। মেঘনা নদীর ওপর নতুন আর একটি সেতু তৈরীর পরিকল্পনা শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে পার্শ্ববতী জেলাগুলোর যোগাযোগ আরো সহজ হবে। এতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট সড়কের বিকল্প অ্যালাইনমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। উল্লেখ্য, নতুন এই সেতুর অন্য প্রান্ত তৈরী হবে আড়াই হাজারের বিশনন্দী এলাকায়। এর ফলে আগরতলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরী হবে। আখাউড়া দিয়ে এই সড়কপথ তৈরীর কথা রয়েছে। অর্থাৎ ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আগরতলা যাওয়ার আরো একটি সহজ পথ তৈরী হচ্ছে।
বলা বাহুল্য, সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি দেশের আর্থিকসহ সার্বিক অগ্রগতির জন্য বিশেষ সহায়ক। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া কোন দেশের পক্ষেই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। তাই সড়কপথ ও সেতু নির্মাণ অত্যন্ত আবশ্যকীয় বিষয়। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর মতো একটি যুগান্তকারী স্থাপনা নির্মাণ করেছে। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসনীয়। এতে এদেশের মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে মেঘনা নদীর ওপর আরেকটি সেতুর মতো ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা কতোটুকু যৌক্তিক।
জানা গেছে, আগামী বছর থেকে অনেকগুলো বড় প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ধাক্কা শুরু হচ্ছে। আর এটা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। ২০২৭ সালে গিয়ে সেটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। এ ধাক্কা পরবর্তী আরো কয়েক বছর ধরে চলবে। বিশেষভাবে আগামী বছর থেকে চীনসহ এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণের সুদ ও আসলসহ পরিশোধ হবে। এছাড়া রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়া থেকে নেওয়া ঋণের গ্রেস পিরিয়ড অর্থাৎ রেয়াতকাল শেষ হয়ে ২০২৭ সালে শুরু হবে মূল ঋণের কিস্তি পরিশোধ। ২০২৮ সালে শুরু হবে মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ কার্যক্রম। এসবই দীর্ঘমেয়াদী ঋণ। অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, এর বাইরে অন্যান্য খাতে নেওয়া ঋণও সুদ ও আসলে এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েই প্রবল চাপে পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আগামী বছর থেকে ওইসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হলে রিজার্ভে চাপ আরো বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থ বছর জুড়েই রিজার্ভের ওপর চাপ থাকবে। বর্তমানে দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এই স্বল্প মেয়াদী ঋণের কারণেই অর্থনীতিতে ঝুঁকির মাত্রা বেশী। সূত্র আরো জানায়, ধীরে ধীরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। চলতি অর্থ বছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
সরকারের উপর এতো বিপুল বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ সত্বেও আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ করে মেঘনা নদীর ওপর আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ যে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশের কোটি কোটি মানুষের খাদ্যাভাব দুরীকরণের জন্য কার্যকর কোন উদ্যোগ না নিয়ে সেতুর মতো একটি আপাত: অনুৎপাদনশীল মেগা প্রকল্পে এখন ঋণ করে এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পেছনে আরেক দফা বড় অংকের অর্থ লুটপাট ও অর্থ পাচারের দুরভিসন্ধি কাজ করছে, এমন অভিমত সচেতন মহলের। আমরা এদিকে সরকারের হিতকামী মহলের সুদৃষ্টি এবং জনগণের সচেতনতা কামনা করছি।