সুরমার ভাঙন : হুমকির মুখে সদরের কয়েকটি গ্রাম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ৪:১৭:০৪ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
সিলেটে সুরমা নদীর ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে। পানির স্তর যতোই নিচে নামছে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন ততই প্রকট হচ্ছে। এর মধ্যে শতাধিক বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে পড়েছে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, মসজিদ-উপাসনালয়সহ নানা স্থাপনা। ফলে ভাঙনপ্রবণ গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে শতাধিক বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ও মোগলগাঁও ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার জানালেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। অবিলম্বে ব্লক বসানো প্রয়োজন।
সোমবার বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সুরমা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের গোপাল পশ্চিম পাড়া ও হেরাখলা গ্রাম। ব্লক ভেঙে হুমকির মুখে পড়েছে দু’গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়া পাশ^বর্তী মোগলগাঁও ইউনিয়নের যোগীরগাঁও লালারগাঁও, তালুকপাড়া, খালপাড়, মিরেরগাঁও, ফতেহপুর, ফুলকুচি, পিরেরগাঁও, আঁকিলপুর ও নোয়াগাঁওয়ের একাংশে সুরমা নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছে ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
কথা হয় সুরমা নদীর পারের গোপাল পশ্চিমপাড়া গ্রামের মমতা বেগমের সাথে। দিনমজুর স্বামীসহ তার পাঁচ সদস্যের পরিবার। মানুষের সাহায্য নিয়ে বসতঘর নির্মাণ করেন। নদীর পানির স্তর নিচে নামলে শুরু হয় ভাঙন। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বড় বড় ফাটা আর ভাঙা। বাড়ির মায়ায় ফাটা দেইখা-ও ডরাইয়া ডরাইয়া ঘরে আছি। ইলা যদি গাঙ ভাঙতে থাকলে আমার ঘর গাঙও যাইবগি। আমার সব শ্যাস অইযাইবো, আমি যাইমু কই!’
একই গ্রামের দিনমজুর আল-আমিন। একসময় অনেক জমিজমা থাকলেও সব নদীরগর্ভে চলে গেছে। মাত্র এক শতক জমির উপর ছোট্ট একটি ঘর বানিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, এই বাড়িতে কতো হাসি-আনন্দে দিন কাটছে। কত সুখ-দুঃখের স্মৃতি। কিন্তু চোখের সামনে বসতভিটা নদীতে চলে যাচ্ছে। ঘরের সামনে বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারেন না। এটিও চলে গেলে সরানোর মতো আর কোনো জায়গাও নেই।
নদীর দক্ষিণ পারে অবস্থিত কয়েক শ বছরের প্রাচীন হেরাখলা গ্রামটি এখন নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, কবরস্থান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গ্রাস করেছে। নদীর উত্তর পারে চর জেগেছে। বসতভিটা হারিয়ে অনেক পরিবার উত্তর পারের চরে আশ্রয় নিয়েছে। ৬০ বছরের পুরোনো মসজিদটির অর্ধেক ইতোমধ্যে নদীতে।
তোতা মিয়া (৮০) বলেন, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ গৃহস্থ ছিলেন। তার ২০ কাঠা ফসলি জমি ও ৭টি গরু ছিলো। বিভিন্ন জাতের গাছসহ একটি সুন্দর বাড়ি ছিল। এখন এসবের কিছুই নেই। গত দেড় দশকে নদীভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এ কয়েক বছরে তার বাড়ি, জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে নিয়ে তিনি এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত। ছেলেরা পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। গ্রামের অনেকেই নদীভাঙনের কবলে পড়ে তার মতো নিঃস্ব।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এলাকার মানুষ হতদরিদ্র। এ পরিবারগুলোর মাথা গোঁজার স্থানটুকু বাঁচানো যাচ্ছে না। অবিলম্বে ব্লক বসানো প্রয়োজন। না হলে হেরাখলা ও গোপাল পশ্চিম গ্রাম সুরমায় বিলীন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মনাফ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সুরমা নদীর তীরবর্তী হেরাখলা, গোপাল পশ্চিমপাড়া, ধনপুর, জাঙ্গাইল গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে গ্রামগুলো বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবগত করেছি। আশা করি দ্রুততম সময়ে একটি ব্যবস্থা হবে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।