হেরেও হৃদয় জয় মরক্কোর
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:৩৩:১৬ অপরাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার : বিশ্বকাপে এবারের চমক মরক্কো। যেভাবে গ্রুপ পর্ব থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত তারা খেলেছে তাতে বিশ্ব ফুটবলে আরবের এই দেশ এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। ফুটবলের মধ্যে দিয়ে দেশকে এক সম্মানের আসনে বসিয়েছেন আশরফ হাকিমি, হাকিম জিয়েচরা। গোটা বিশ্ব সমীহ করছে তাদের লড়াইকে। সেমিফাইনালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে হারলেও গোটা বিশ্বের মন জয় করেছে তারা।
কিন্তু এটা কি নিছকই ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়া একটি দেশের লড়াই, ইতিহাসের কাল বেয়ে উঠে আসা আরবের একটি দেশের নিজেকে মেলে ধরার গল্প, না কি ফুটবলের মাধ্যমে বিশ্বে নিজেদের সম্মান আদায়ের কাহিনি। এ বছরের বিশ্বকাপে মরক্কো যে ফুটবল খেলছে তাতে বলা যেতে পারে, ফুটবল শুধু মাত্র আর ইউরোপ বা লাতিন আমেরিকায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা দেশ-কালের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে।
সেমিফাইনালে মরক্কো এমন একটা দেশের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল, যে দেশ ৪৪ বছর তাদের শাসন করেছে। শুধু তাই নয়, স্বাধীন হওয়ার পরেও দুই দেশের সংস্কৃতির এক অদ্ভুত মেলবন্ধন হয়েছে। মরক্কোর প্রায় ৫০ লাখ বাসিন্দা থাকেন ফ্রান্সে। তাদের একটা বড় অংশের দু’দেশেরই নাগরিকত্ব রয়েছে। মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই এবং দুই ফুটবলার রোমান সাইস ও বৌফাল মরক্কোর পাশাপাশি ফ্রান্সেরও নাগরিক। এমন অনেক সমর্থক কাতারে এসেছেন যাঁদের বাবা-মায়ের এক জন মরক্কোর, তো অন্য জন ফ্রান্সের।
দু’দেশের দুই সেরা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে ও আশরফ হাকিমিও খুব ভাল বন্ধু। ক্লাবে সতীর্থ তারা। কিন্তু সেমিফাইনালে নিজের নিজের দেশের জন্য তারা খেললেন। মরক্কো দেখাল, ধারে ভারে তারা ফ্রান্সের থেকে যতই পিছিয়ে থাকুক না কেন, আবেগ ও আত্মবিশ্বাস কোনও দলকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই করল তারা। শুরুতে গোল খাওয়ার পরেও হতোদ্যম না হয়ে পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপাল। একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, কোনও রকমে গোল বাঁচানোর চেষ্টা করছে ফ্রান্স। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়েছে মরক্কোকে। তার একমাত্র কারণ, সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের কাছে ০-২ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মরক্কোর।
মাথা উঁচু করে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে মরক্কো। খেলায় সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে তারা। কোনও কোনও সময় তো বিশ্বচ্যাম্পিয়নদেরও টেক্কা দিয়েছেন রেগরাগুইয়ের ছেলেরা। গোল লক্ষ্য করে শট বেশি মেরেছে তারা। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। খেলা শেষ হওয়ার ১১ মিনিট আগে এমবাপের শট মরক্কোর ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে পৌঁছায় কোলো মুয়ানির কাছে। ফরাসি ফুটবলার দলের দ্বিতীয় গোল করার পরেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় মরক্কোর।
কিন্তু হারলেও এবারের বিশ^কাপে ফুটবলের শক্তিতে তথাকথিত পিছিয়ে থাকা দেশ সেরাদের চোখে চোখ রেখে খেলেছে। যা ফুটবল বিশ্বকে মোহিত করেছে।