আজ বিশ্বকাপ ফাইনাল : ফুটবলের মুকুট ফ্রান্স না আর্জেন্টিনার?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ৪:১৭:৪৫ অপরাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার : বিশ্ববাসীর চোখ এখন ঘড়ির কাঁটায়। কাতার বিশ্বকাপে আজই বাজবে বিদায়ের বাঁশি। রাতেই নিশ্চিত হবে আগামী চার বছরের জন্য ফুটবলের মুকুট পরবে কে? ভয়ঙ্কর ফ্রান্স না কি জাদুকর মেসির আর্জেন্টিনা। রাত ৯টায় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই দল। উভয়েই নামবে তৃতীয় শিরোপা জয়ের মিশনে।
ইতিমধ্যে আর্জেন্টিনা ফাইনালের রণকৌশল চুড়ান্ত করে ফেলেছে। কিলিয়ান এমবাপ্পে, অলিভিয়ের জিরু, আঁতোয়ান গ্রিজমানদের থামাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি আর্জেন্টিনাও। লিওনেল মেসি, হুলিয়ান আলভারেজ, রদ্রিগো দি পলদের তিন ছকে অনুশীলন করিয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। প্রস্তুতিতে যাতে বিন্দুমাত্র ঘাটতি না থাকে, সে কারণে আলাদা আলাদা কৌশলে ফাইনালের মহড়া দিয়ে রেখেছেন স্কালোনি। এর মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে কিছুটা বিভ্রান্তিতে ফেলেছেন কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে কম বয়সী কোচ। আর্জেন্টিনা আজ কোন ছকে খেলবে, সেটা মাঠে নামার আগপর্যন্ত বুঝতে পারবে না ফরাসি কোচিং স্টাফ।
ওদিকে, ফ্রান্সের কৌশল জানা না গেলেও তাদের অন্যতম সেরা তারকা বেনজেমাকে নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। সর্বনাশা ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপে একটি ম্যাচেও খেলা হয়নি করিম বেনজেমার। তবে আছেন ফ্রান্সের ২৬ সদস্যের স্কোয়াডে। টুর্নামেন্টজুড়েই গুঞ্জন ছিল, যে কোনো সময় মাঠে ফিরতে পারেন তিনি। এবার নতুন করে শোনা যাচ্ছে, ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলতে পারেন বেনজেমা। তবে এ ব্যাপারে দলের তরফে নিশ্চিত করা হয়নি।
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, যেহেতু বেনজেমার বদলি হিসেবে কাউকে দলে নেয়া হয়নি। আর তাই তার ফিরতে কোনো বাধা নেই। তিনি চাইলে যে কোনো সময় আবার দলে ফিরতে পারবেন, ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতলে পাবেন পদকও।
বেনজেমা সত্যি সত্যি ফাইনালে ফিরলে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে ওলিভার জিরুদকে। যিনি চলতি বিশ্বকাপে চার গোল দিয়ে আছেন গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের নায়কও জিরুদ।
পরিসংখ্যানের আলোকে দল দুটির রেকর্ড :
১. বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনবার দেখা হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের। দুইবার জয়ের মুখ দেখেছে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্স জিতেছে একটিতে সর্বশেষ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ৪-৩ গোলে। এ ছাড়া দু’দল সার্বিকভাবে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে ১২ বার। যেখানে আর্জেন্টিনার জয় ৬টি। ফ্রান্স জিতেছে ৩ ম্যাচ। বাকি তিনটি ড্র।
২. বিশ্বকাপে এটি আর্জেন্টিনার ষষ্ঠ ফাইনাল। ফ্রান্স খেলছে চতুর্থবারের মতো। উভয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুই বার করে। আর্জেন্টিনা শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে। ফ্রান্স ১৯৯৮ সালের পর দ্বিতীয় শিরোপা জেতে গত আসরে।
৩. চলতি বিশ্বকাপে এখন অবধি বিপক্ষের জালে আর্জেন্টিনার বল জড়িয়েছে ১২ বার। এক আসরে তাদের সর্বোচ্চ গোল ১৪টি। এটি আসে ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ বিশ্বজয়ী আসরে।
৪. আন্তর্জাতিক ফুটবলে টানা ৩৬ ম্যাচ জয়ের পর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারে আর্জেন্টিনা। এরপর আবার জয়টাকে অভ্যাস করে নেয়। সব মিলিয়ে সর্বশেষ ৪২ ম্যাচে একটিই হার তাদের। জিতেছে ২৯ ম্যাচ, ড্র ১২টি।
৫. ১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিল টানা ফাইনাল খেলে। এরপর প্রথম দল হিসেবে টানা দুইটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে ফ্রান্স। ইতালি ও ব্রাজিলের পর ইতিহাসের তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ফরাসিদের সামনে। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে ইতালি এবং ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে ব্রাজিল টানা দুই শিরোপা জেতে।
৬. চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাঁচটি করে গোল করেছেন লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। গত আসরে এমবাপ্পের গেল ছিল চারটি। বিশ্বকাপে দুই আসরে ১৩ ম্যাচ খেলে এমবাপ্পের গোলসংখ্যা ৯টি। অন্যদিকে, পাঁচটি বিশ্বকাপে ২৫ ম্যাচ খেলা মেসির গোল ১১টি। ফাইনালে এক গোল করলে বসবেন কিংবদন্তি পেলের পাশে।
৭. ফাইনালে মাঠে নামলে মেসি হবেন এককভাবে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা তারকা। জার্মান কিংবদন্তি লোথার ম্যাথিউসের সঙ্গে যৌথভাব শীর্ষে আছেন মেসি। দুজন খেলেছেন ২৫টি করে ম্যাচ। ২৫ ম্যাচে মেসির গোল ১১, যা কি-না আর্জেন্টাইন হিসেবে সর্বোচ্চ।
৮. ফ্রান্স অধিনায়ক ও গোলরক্ষক হুগো লরিসকে ডাকছে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফরাসিরা শিরোপা জিতেছিল তার নেতৃত্বেই। এছাড়া ফাইনালে নামলেই বিশ্বকাপে গোলরক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা এককভাবে লরিসের হয়ে যাবে। এখন যৌথভাবে শীর্ষে আছেন জার্মান গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যারের সঙ্গে। দুজনই খেলেছেন ১৯ ম্যাচ।