সংক্রমণ বাড়ছে কিছু দেশে : চীনে ১০ লাখ মৃত্যুর শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৪৫:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : করোনার সংক্রমণ বাংলাদেশে ক্রমেই কমে আসছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বেড়েছে। এই তালিকায় আছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ। চীনে আগামী বছর ১০ লাখ মৃত্যুরও আশঙ্কা করেছে ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স এবং অ্যাভ্যুলেশন। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে সংক্রমণের পেছনে আছে মূলত করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ সংক্রমণ হচ্ছে অমিক্রনে। গত বছরের ২৬ নভেম্বর করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরন প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। চার সপ্তাহের মধ্যে অমিক্রন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অমিক্রনের রয়েছে পাঁচ শতাধিক উপধরন।
বাংলাদেশেও অমিক্রনের উপধরন এখন সক্রিয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, বাংলাদেশে কয়েক মাস ধরে অমিক্রনের বিভিন্ন ধরনই সক্রিয় আছে। নমুনা পরীক্ষায় বর্তমানে এক্সবিবি.১ নামের উপধরনটি বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
আইইডিসিআরের পরিচালকসহ দেশের জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশে সংক্রমণের হার খুবই কম। মৃত্যুও কমে এসেছে। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। তবে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সর্বশেষ সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্ব্কি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ১৪ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনে ৫ থেকে ১১ ডিসেম্বর-এই সাত দিনের বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সাত দিনে সারা বিশ্বে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৩১০ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন ৪ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বশেষ সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা তার আগের সপ্তাহের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এই বৃদ্ধি খুব আশঙ্কাজনক না হলেও শীতপ্রধান দেশগুলোতে বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা নিতে হবে। এসব দেশে শীতের সঙ্গে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ অবস্থায় বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, আগামী বছর থেকে করোনাকে ঘিরে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা আর থাকবে না। আগামী জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটি বৈঠকে বসবে। এই কমিটি মূলত সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসকে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
কিছু দেশে এ সময়ে সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে। জাপানে নতুন শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭১ জন। আগের সপ্তাহের চেয়ে তা ১৩ শতাংশ বেশি। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৪ জন নতুন রোগী। যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। জাপানের প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায়ও বাড়ছে সংক্রমণের হার। দেশটিতে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৯২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এক সপ্তাহে। এটি আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ফ্রান্সে শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
সর্বশেষ এক সপ্তাহে করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে ৭ দিনে ২ হাজার ৯৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ দেশটিতে এখনো দৈনিক তিন শর বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। ওই সময়ে জাপান, ব্রাজিল ও ফ্রান্সে করোনায় মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৫৮, ৬০৩ ও ৪৭৮ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়টি অঞ্চলের মধ্যে ওই সপ্তাহে দুটি অঞ্চলে শুধু করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। সেই দুটি অঞ্চল হলো পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আমেরিকা অঞ্চল। দুই অঞ্চলে যথাক্রমে সংক্রমণ আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩ ও ২৭ শতাংশ বেড়েছে। বাকি অঞ্চলগুলোর মধ্যে ইউরোপে ১১ শতাংশ, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ৩৩ শতাংশ, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ২ শতাংশ ও আফ্রিকায় ৭৩ শতাংশ সংক্রমণ কমেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্য সংস্থা ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স এবং অ্যাভ্যুলেশন (আইএইচএমই) এর আশঙ্কা, চীনে ২০২৩ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
সংস্থাটির পরিচালক ক্রিস্টোফার মুরে বলেন, আমার ধারণা, আগামী বছরের এপ্রিলে চীনে করোনার সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। পাশাপাশি দেশটির চার ভাগের তিন ভাগ মানুষ প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন। তিনি বলেন, চীন এত দীর্ঘ সময় ধরে জিরো কোভিড নীতি অব্যাহত রাখবে, তা কেউই ভাবতে পারেনি। কঠোর নীতির কারণে প্রথমদিকে করোনাভারাসের অন্যান্য ধরন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেয়েছে চীন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, শনিবার বিকেল পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ কোটি ৭২ লাখেরও বেশী। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৬ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশী।