সিকৃবির ‘ট্রাম্পি’ আর নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:৪৩:২৭ অপরাহ্ন
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পরিচিত মুখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুখ-দুঃখের সাথী ‘ট্রাম্পি’ রোববার (১৮ ডিসেম্বর) মারা গিয়েছে। মানুষের সাথে প্রাণির বন্ধুত্বের আর মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে মূর্ত হয়েছিল ধবধবে সাদা, শান্ত স্বভাবের এক কুকুর যার নাম ট্রাম্পি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ক্লাসরুম, পরিক্ষার হল, আবাসিক হল কিংবা মিছিল সহ যেকোন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ছাত্র আন্দোলনে ট্রাম্পির সরব উপস্থিতি ছিল বিগত ৬ টি বছর। সব নিয়ম ভেঙ্গে যেকোন জনসমাগমে ঢুকে পড়তো ট্রাম্পি, দিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী টিলায় বসে থাকা যেকোন নিঃসঙ্গ শিক্ষার্থীকেও সঙ্গ দিতে এগিয়ে আসতো ট্রাম্পি। মানুষে সাথে এতো সখ্যতা গড়ে উঠায় ক্যাম্পাসের অন্যান্য কুকুরের সাথে ঝামেলায় জড়াতেও দেখা গিয়েছে ট্রাম্পিকে।
সাধারণ একটি কুকুর থেকে মানুষের ভালোবাসা পেয়ে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় কুকুর হয়ে উঠে এই ট্রাম্পি। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম তাকে নিয়ে করেছে ফিচার প্রতিবেদন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জন্ম ট্রাম্পির। প্রতি বছর ২৮ ডিসেম্বর তার জন্মদিন পালন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আছে ট্রাম্পির নামে একটি পেজ, যেখানে প্রতিনিয়ত দেয়া হতো তার বিভিন্ন আপডেট।
২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ এ এম এস কিবরিয়া হলে ট্রাম্পিকে পালন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ সামিউর রহমান শুভ, মোঃ শরিফুল আলম সুমন, রিয়াজুল ইসলাম রিয়াদ ও মোঃ রাজিব। ধীরে ধীরে ট্রাম্পি জায়গা করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর মনে।
ট্রাম্পির সবচেয়ে বেশি যত্ন নিয়েছেন এবং দেখভাল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি অধিকার রক্ষা সংশ্লিষ্ট সংগঠন প্রাধিকারের সাবেক সভাপতি বিনায়ক শর্মা। এছাড়াও প্রাধিকার প্রায়ই ট্রাম্পির দেখাশোনা করেছে, অসুস্থতায় দিয়েছে চিকিৎসাসেবা। ট্রাম্পি ক্যানাইন ট্রান্সমিসিবল ভেনেরাল টিউমারে (সিটিভিটি) আক্রান্ত হলে তাকে কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়েছিল। এতে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠেছিল ট্রাম্পি। পরবর্তীতে আবারও প্যারাসাইটিক স্কিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করে ট্রাম্পিকে সুস্থ করে তুলে ছিলেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঘোরী মো. ওয়াসিমকে বাস থেকে ফেলে হত্যার ঘটনায় সিলেট শহরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দিয়ে প্রথম গণমাধ্যমের নজরে আসে ট্রাম্পি। এরপর তাকে নিয়ে গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেছে বেশ কিছু প্রতিবেদন।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নন, সিলেট শহর থেকে কিংবা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অতিথিরা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলেই দেখা করে যেতেন ট্রাম্পির সাথে। এভাবেই মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠা ট্রাম্পির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুচকা চত্বরে শেষকৃত্য শেষে ট্রাম্পির নিথর দেহকে কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামের পাশে শায়িত করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞপ্তি