সিলেটে বাড়ছে সূর্যমুখী চাষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:১০:২৮ অপরাহ্ন
গত বছরের তুলনায় এবার সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় সূর্যমূখী আবাদ বেড়েছে। গোটা বিভাগ জুড়ে এটি আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হচ্ছে। সূর্যমুখী বীজ থেকে যে তেল হয় তা বেশ পুষ্টিকর, কোলেষ্টরল কম থাকায় তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার মত এতে কোনো ক্ষতিকর এমাইনো এসিড নেই। এজন্য সূর্যমুখীর তেল এর বাজার মূল্য সয়াবিন ও সরিষার চেয়ে বেশি। এছাড়া এর খৈল পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখীর পরিপক্ক মাথা হার্ভেষ্ট করার পর এর গাছগুলো জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে এ বছর সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৯০৮ হেক্টর। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৮৫৩ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৩৬০ হেক্টর, হবিগঞ্জে ৫২০ ও সুনামগঞ্জ ১৭৫ হেক্টর। ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে প্রায় ৯৮৭ হেক্টর।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোসাইন মোঃ এরশাদ জানান, উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবছর প্রণোদনার মাধ্যমে ১৮০ জন কৃষককে সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, সূর্যমুখী থেকে তেলের পাশাপাশি ফুল বাগান থেকে মৌচাষেরও সম্ভাবনা রয়েছে ব্যপক। সূর্যমুখীর ফুল বড় বলে প্রচুর মধু আহরণ সম্ভব। আবার মৌচাষে প্রাকৃতিক পরাগায়নের জন্য সূর্যমুখীর ফলনও হয় বেশি।
জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, যেসব জমিতে আলু, খেসারি বা আমন চাষ হতো সেসব জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আরো আগ্রহ বৃদ্ধি করাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে এ চাষের ব্যাপক প্রসারতা ঘটবে। তখন দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সূর্যমুখী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, খুব অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছে। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। এবং প্রতি একর জমিতে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রকার ভেদে লাভ হয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়।
দক্ষিণ সুরমার জালালপুর ইউনিয়নের রায়খাইল গ্রামের কৃষক জহির আলী বলেন, এ বছর দেড় একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে অধিক আয় হবে বলে তিনি জানান।
দক্ষিণ সুরমার কামালবাজারের কৃষক ছৈদুর রহমান বলেন, এর আগে আমার বেশ কিছু জমি এ মৌসুমে পরিত্যক্ত থাকতো। গত দুবছর ধরে সূর্যমুখী চাষ করে ভালো লাভ হচ্ছে। তবে সিলেটে আধুনিক প্রযুক্তির একটি তেল শোধনাগার থাকলে আমাদের এই ফসলে আরো চাহিদা বাড়তো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক ড. কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, এ বছর তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় সূর্যমূখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভাগের প্রতিটি উপজেলায় বিনামূল্যে বীজ, সার এবং নানাবিধ কৃষি সহায়তা দেয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে এগিয়ে আসছে। গত বছরের চেয়ে এবছর বিভাগে সূর্যমুখীর ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। সূর্যমুখীর চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। তিনি বলেন, সিলেটের পতিত জমিতে সবজি সহ তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এ বিভাগের প্রতিটি জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসতে কৃষি বিভাগ তৎপর রয়েছে। বিজ্ঞপ্তি