নতুন কোভিড ঝুঁকিতে বিশ্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ৪:০০:৪০ অপরাহ্ন
এটি ৪ গুণ বেশি সংক্রামক : স্বাস্থ্য অধিদফতর
দেশের সব বন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং বাড়ানোর নির্দেশ
জালালাবাদ রিপোর্ট : ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর তা মহামারি আকারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এলেমোলো হয়ে যায় গোটা বিশ^। স্তব্ধ হয়ে পড়ে সবকিছু। এ বছরের ডিসেম্বরে এসে আবারও নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। করোনার অমিক্রনের ধরনের একটি উপধরনের কারণে এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ফের কি ফিরবে আতঙ্কের দিন? সবেমাত্র অতিমারীর কবল থেকে মুক্তির হাওয়া বইছিলো। এবার আচমকাই নতুন করে কোভিড কাঁটায় বিদ্ধ পৃথিবী।
এর মধ্যেই সাপ্তাহিক সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষে থাকা দেশগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এক সপ্তাহে কোন দেশে পর্যন্ত কত জন সংক্রমিত, তা-ও প্রকাশ করেছে।
চীনের পর সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে জাপান। ১১ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সে দেশে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৫০ জন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেদেশে ওই এক সপ্তাহে নতুন করে সংক্রমিত ৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮১১ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে ওই এক সপ্তাহে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪২৪ জন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। সেখানে নতুন করে আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৪১ হাজার ১৩৬ জন। ব্রাজিলে ওই এক সপ্তাহে নতুন করে আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮১০ জন।
ওই এক সপ্তাহে কোন দেশে কোভিডে কত মৃত্যু হয়েছে, তারও পরিসংখ্যান দিয়েছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। তাতে দেখা গেছে, কোভিডে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। সেখানে এক সপ্তাহে মারা গেছেন ২ হাজার ৬৫৮ জন। সাপ্তাহিক মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাপান। সেখানে এক সপ্তাহে মারা গেছেন ১ হাজার ৬১৭ জন। তৃতীয় ব্রাজিল। সেখানে কোভিডে এক সপ্তাহে মারা গেছেন ১ হাজার ১৩৩ জন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। সেখানে এক সপ্তাহে মারা গেছেন ৬৮৬ জন। কোভিডে মৃত্যুর নিরিখে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইটালি। সেখানে এক সপ্তাহে মারা গেছেন ৫১৯ জন।
ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরেও বলা হয়েছে ইতিমধ্যে ভারতে উপধরন বিএফে আক্রান্ত ৪ জন শনাক্ত হয়েছে। এদের ২ জন ওডিশা ও ২ জন গুজরাট রাজ্যের।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণ বাড়লে বা নতুন ধরন শনাক্ত হলে উদ্বেগ বাড়ে বাংলাদেশে। যদিও বাংলাদেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তবুও নতুন ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের কোভিড বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি ৪ দফা সুপারিশ জানিয়েছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, হাত পরিষ্কার রাখা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীসহ সবাইকে দ্রুত টিকার আওতায় নিয়ে আসা। সব পয়েন্ট অব এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন আরো জোরদার করা। সংক্রমণ বেড়ে গেলে তা মোকাবিলায় হাসপাতাল প্রস্তুতি বিশেষ করে পর্যাপ্ত সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবাহের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
এদিকে বিএফ-৭ নামের এ নতুন ধরন অমিক্রনের চেয়েও চার গুণ বেশি সংক্রামক বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ধরন কম সময়ের মধ্যে রোগীকে আক্রান্ত করে। রোববার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, চীনে বিএফ-৫-এর নতুন ধরন বিএফ-৭ শনাক্ত হয়েছে। ধরনটি অমিক্রনের চেয়ে শক্তিশালী। কম সময়ে বেশি মানুষকে এই ধরন আক্রান্ত করতে পারে। যারা টিকা নেননি, তাদের দ্রুত টিকা নিতে হবে।
আহমেদুল কবীর আরও বলেন, করোনার নতুন ধরন ভারতেও শনাক্ত হয়েছে। তাই দেশের সব বন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনার জেনোমিক সিকোয়েন্সিং করে এই বিএফ-৭ করোনাভাইরাস রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করতে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভার সিদ্ধান্ত উল্লখ করে অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতা ও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের একটি ধরন অমিক্রন। অমিক্রনের একটি উপধরন বিএ-৫। বিএ-৫-এর একটি উপধরন বিএফ-৭। বিএফ অন্য যেকোনো উপধরনের চেয়ে দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এটাই উদ্বেগের কারণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ পেয়েছেন যথাক্রমে ৭৪ ও ৩৮ শতাংশ মানুষ।