একযুগ পর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা আজ : সিলেটে পরীক্ষার্থী ৪৪ হাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৫:১২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : টানা ১২ বছর পর বৃত্তি পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। দেশে এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ শিক্ষার্থী। বৃত্তি পাবে ৮২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার এবং সাধারণ গ্রেডে ৪৯ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হবে।
সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৭৩টি কেন্দ্রে বৃত্তি পরীক্ষায় ৪৩ হাজার ৭৩২ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে বলে দৈনিক জালালাবাদকে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় উপ পরিচালক জালাল উদ্দিন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ২৪ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ১৩ হাজার ৮৯৪ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৮ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ১০ হাজার ৯৭২ জন, মৌলভীবাজার জেলায় ১৪ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ৮ হাজার ৮৪৯ জন ও হবিগঞ্জ জেলায় ১৭ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ১০ হাজার ১৭ জন।
তিনি আরো জানান, সিলেট বিভাগের সবগুলো কেন্দ্র পরীক্ষার জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার, স্ব স্ব জেলার জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিস বৃত্তি পরীক্ষার মনিটরিং করছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ইতোমধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই জেলা পর্যায়ে প্রশ্নপত্র পৌঁছে গেছে। ভ্যেনু ও পরীক্ষার হলের পরিদর্শক ঠিক করা হয়েছে। আশা করছি উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসার ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা নেব। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বৃত্তির বিষয়ে এখনও তারা (মাদরাসা বোর্ড) কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষাসমাপনী পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী এবার ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার ও সাধারণ গ্রেডে ৪৯ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হবে। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির ক্ষেত্রে উপজেলা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যার ভিত্তিতে মোট বৃত্তির ৫০ শতাংশ ছাত্র এবং ৫০ শতাংশ ছাত্রীদের মধ্যে জেন্ডারভিত্তিক মেধা অনুসারে প্রদান করা হবে। সাধারণ গ্রেডে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক ৩ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রী হিসেবে ৪৯ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হবে। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসিক ৩০০ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসিক ২২৫ টাকা করে পাবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। চারটি বিষয় থেকে প্রশ্ন থাকবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা হবে। প্রতিটি বিষয়ে ২৫ নম্বর করে প্রশ্ন থাকবে। বহু-নির্বাচনী এবং লিখিত দুই ধরনের প্রশ্নই থাকবে। পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দুই ঘণ্টা। ৪০ শতাংশ প্রশ্ন থাকবে লিখিত। আর ৬০ শতাংশ প্রশ্ন হবে এমসিকিউ পদ্ধতির। ২০০৯ সাল থেকে জাতীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে শুধু সাধারণ ধারার শিক্ষায় এটি সীমাবদ্ধ ছিল। পরে মাদরাসার ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (পঞ্চম শ্রেণির সমমান) পরীক্ষাও চালু করা হয়। ২০১০ সালে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা চালুর পরই বন্ধ হয়ে যায় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হয়নি জেএসসি ও জেডিসি সমমান পরীক্ষা। এবারও এ দুটি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হওয়া নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা থাকবে না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে সরকার। পিইসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তের পরই প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে মেধাবৃত্তি দেওয়ার বিকল্প মেধা যাচাই পদ্ধতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় বর্তমান প্রচলিত নিয়ম ও পদ্ধতিতেই প্রাথমিক বৃত্তি দেওয়া অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।