কি ঘটবে নতুন বছরে?
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩৫:১১ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
জালালাবাদ রিপোর্ট : ঘটনা-দুর্ঘটনার আলোচিত ২০২২ শেষে এলো নতুন বছর। গত বছরের শেষ দিকে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলো রাজনীতি। উত্তাপ, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা-সবই ছিলো রাজনীতির মাঠে। ২০২৩-এ এসেও রাজনীতির বাতাস উত্তপ্ত থাকবে-এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরের কিছু বেশি সময়। নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয়েছে আগাম উত্তাপ। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এখন নিজেদের অবস্থান পুনরায় পাকাপোক্ত করতে মরিয়া। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো পনেরো বছরের খরা কাটাতে মরিয়া। এতে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এ বছর রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় থাকবে জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম থাকবে সেটিকে কেন্দ্র করেই।
গত বছর দেশব্যাপী গণ-সমাবেশ, গণ-মিছিলের মতো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়েছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা করেছে জামায়াতও।
সরকারী দল ও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান উত্তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজনীতির মাঠে। নতুন বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী হতে পারে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
বিএনপির সামনে প্রধান দুই সংকট হল পনেরো বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং দলের শীর্ষ দুই নেতার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া। দলীয় কর্মসূচিতে তারা একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে যে তারা শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে আর যাবে না। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ বিলুপ্তির দাবিতে দলটি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
এমন অবস্থাতে দল যথেষ্ট সংগঠিত এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের এতো নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এতো বাধাবিপত্তি তারপরও কি সমাবেশে আমাদের লোক কম হয়েছে? তিনি বলেন, আমরা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণ-মিছিল করেছি, একজন নেতা থাকবেন না তাতে কি হয়েছে? দল সংগঠিত, যেকোনো প্রোগ্রাম করার মতো ক্ষমতা দলের আছে, তিনি বলেন।
রাজনীতি বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরীও মনে করেন পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপি এবারে আগের চাইতে সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে গিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে দলটি সামনের বছর নিজেদের আরো শক্তিশালী করতে চাইবে। তিনি জানান, বিএনপি এখন একা নয়, তাদের সঙ্গে অন্য বিরোধীদলগুলো যোগ দিয়েছে, যা তাদের অবস্থানকে আরও জোরালো করেছে।
বিএনপি এখন যে অহিংস পথ বেছে নিয়েছে একে বিএনপি কৌশলগত ভালো কাজ বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, বিএনপির তৃণমূল থেকে যে সাংগঠনিক শক্তির উত্থান হয়েছে সেটাকে আরও মজবুত করতে পারলে বিএনপি এখন শক্ত অবস্থানে চলে যেতে পারবে। বিএনপিতে যারা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই আন্দোলনটিকে ধাপে ধাপে অহিংস পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
গত ১৫ বছর ধরে জামায়াতও নানা সংকট পার করছে। দলের প্রথম সারির নেতাদের দেয়া হয়েছে ফাসি। অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাবন্দি। সরকার এখনো তাদের ব্যাপরে নমনীয় নয়। যার প্রমাণ দেখা গেলো গত ৩০ ডিসেম্বর। দলের গণমমিছিলে কঠোর অ্যাকশনে যায় পুলিশ। এতে অনেক নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হন, গ্রেফতারও হন। সেদিন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম বিবৃতিতে বলেন, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী। জামায়াতে ইসলামীর গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে একদিকে সংবিধানকে অবজ্ঞা করা হয়েছে, অন্যদিকে কোটি কোটি মানুষের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু হওয়ার পর কিছু অতি উসৎসাহী পুলিশ বাধা দেয় এবং মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।
তবে হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার জামায়াতের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন। এ অবস্থায় নতুন বছরে নির্বাচনের আগে জামায়াত কোন দিকে হাঁটে-সেদিকেই চোখ বিশ্লেষকদের।
এদিকে, এখন আওয়ামীলীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোও বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের নেতারা বলছেন, মাঠ কারও কাছে ইজারা দেয়া হয়নি। আমরা মাঠ ছেড়ে যাইনি। খোদ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন এমন কথা।
কিন্তু মাঠে থাকা এই আওয়ামীলীগের সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করতে পারবে- সেটি নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন মহলে বড় প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ভোটের পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ জেগেছে। নির্বাচনের আগে এটি আওয়ামীলীগের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যতো নির্বাচন হয়েছে প্রত্যেকটি নির্বাচনে পরাজিত দল নির্বাচনকে ঘিরে অনেক অভিযোগ উত্থাপন করেছে। সেই বিষয়টিকে বিবেচনায় আনলে নির্বাচন একেবারে অভিযোগমুক্ত করা খুব কঠিন।
একটি রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তাদের জয় লাভের কোন সম্ভাবনা নাই তখন তারা টার্গেট করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সেটা তারা করতেই পারে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
তবে বিগত দুই নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, নিজেদের কাজ ও আচরণ দিয়ে মানুষের মনে আস্থা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তোলা।
রাজনীতি বিশ্লেষক শান্তনু মজুমদার বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে এই ইমেজের সংকট অতিক্রম করাই আওয়ামীলীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলন, বিরোধী দলের সাথে শ্রদ্ধাশীল আলোচনার মাধ্যমে আওয়ামীলীগ হয়তো তাদের ইমেজ ঠিক হতে পারে। যেহেতু ক্ষমতাসীন দলকে মানবাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন এমন একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। তার সদুত্তর ঠিক করতে দলের যথাযথ প্রস্তুতির প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তবে সরকারের কৌশল দেখে তিনি বুঝতে পারছেন না যে তারা কিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করবে।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। সে অনুযায়ী ভোটের বাকি এখনও এক বছরের কিছু বেশি সময়। এই নির্বাচন কীভাবে হবে, কারা অংশ নেবে এনিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষদের। সব বিশ্লেষণই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ২০২৩ সাল বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছরই হতে চলেছে।