সুনামগঞ্জে হাওররক্ষা বাঁধের পিআইসি গঠনে বিলম্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ৬:৪৯:১৬ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধের পিআইসি কমিটি গঠনে বিলম্ব ছাড়াও লুকোচুরির অভিযোগ উঠছে। কোথাও কোথাও কমিটি ভাগিয়ে নিতে পাউবোর সাথে চলছে দর কষাকষি। অনেক প্রকল্প কমিটির লোকজন আগে থেকে টাকা দিয়ে রাখছেন পাউবোর কর্মকর্তাদের। এছাড়া রয়েছে নানা তদবির। বছরের এই সময়টা হাওরের পিআইসি নিয়ে লুটপাটের উৎসব চলে।
জানা যায়, হাওররক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভায় ৫৮০ টি বাঁধের কাজের অনুমোদন হলেও বুধবার পর্যন্ত ১২ উপজেলায় পিআইসি গঠন হয়েছে ৪২৬ টি। এ কারণে বাঁধের কাজও দ্রুত শুরু হচ্ছে না। অন্যদিকে পিআইসি গঠনে লুকোচুরিও আছে কোথাও কোথাও। নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হাওরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে বাঁধের কাজ শুরু হবার কথা। বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য থাকবে সাত সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি
গেল বছর সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ৪৮ টি হাওর এবং অন্যান্য ছয়টি অঞ্চলের জন্য ৭২৭ টি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এজন্য পিআইসি গঠন হয় ৭২৭ টি। এসব পিআইসি গঠন নিয়ে নানা কথা ওঠেছিল। পিআইসি গঠন নিয়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও ছিল কোন কোন এলাকায়। সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষককে যুক্ত না করে অন্য এলাকার কৃষককে দিয়ে বাঁধের কাজ করানোসহ অপেক্ষাকৃত দুর্বল কৃষককে কমিটিতে রেখে নেপথ্যে প্রভাবশালীদের বাঁধ ব্যবসা করার অভিযোগ ছিল হাওরজুড়েই। এসব অভিযোগ সবচেয়ে বেশি ছিল ধর্মপাশা উপজেলায়। এবারও শুরুতেই কোন কোন এলাকায় নানা কথা ওঠেছে। তাহিরপুর উপজেলায় প্রথম দফায় অনুমোদন হওয়া ১৫ পিআইসির কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ৩১ ডিসেম্বর বৈঠক হয়। বৈঠকে উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি, সদস্য সচিব, কমিটির সদস্য আব্দুস সোবহান আখঞ্জি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে ১৫ টি পিআইসির কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একদিন পরই ১৫ টি পিআইসির কমিটি অনুমোদন হয়েছে প্রচার হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন কমিটির সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সোবহান আখঞ্জি।
মঙ্গলবার বিকালে আব্দুস সোবহান আখঞ্জি এ প্রতিবেদককে বললেন, কমিটির সভায় নিজের কোন লাভের চিন্তা করে যাই না। বাঁধের পিআইসির দায়িত্ব কে পেল সেটিও খোঁজার প্রয়োজন মনে করি না। হাওরের ফসল রক্ষায় সরকারের বরাদ্দের টাকা মানুষের কাজে লাগুক সেই আকাঙ্খা নিয়ে যাই। ফসল ডুবলে আমরা সকলেই বিপদে পড়বো। ৩১ ডিসেম্বরের সভায় কমিটির উপদেষ্টা সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বিকাল সাড়ে চারটায় আসেন, পরে কমিটির সভাপতি সদস্য সচিবসহ কয়েকজনকে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়ে এমপি চলে যান। দুইদিন পর শোনা গেল ১৫ টি পিআইসির কমিটি গঠন হয়েছে। এটি কিভাবে হলো জানলাম না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব শওকতুজ্জামান অবশ্য দাবি করেছেন, উপজেলা কমিটির সকলের উপস্থিতিতে আলোচনা করেই ১৫ টি পিআইসির কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম স¤পাদক শামীম আহমদ মুরাদ জানান, গেল বছরের মত এবারও পিআইসি অনুমোদন করিয়ে দেবার কথা বলে টাকা লেনদেন শুরু হয়েছে। এক একটি পিআইসির জন্য এক থেকে দুই লাখ লেনদেন হচ্ছে। ধর্মপাশা উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১১৭ টি প্রকল্পের মধ্যে ১৫ টি পিআইসি অনুমোদন হয়েছে। অন্যগুলোর পিআইসিও প্রস্তুত আছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই পিআইসি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। পিআইসি গঠন নিয়ে কোন জটিলতা দেখেন নি তিনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বললেন, ৫৮০ টি হাওররক্ষা বাঁধের প্রকল্প জেলা কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। এরমধ্যে ৪২৬ টি পিআইসি পাওয়া গেছে। পিআইসি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে কেন জানতে চাইলে, তিনি বললেন, সম্ভবত যাচাই-বাছাইয়ে বিলম্ব হচ্ছে।