ভাঙ্গাড়িতে ভাটার টান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৪৪:৩০ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল: সিলেটে সাধারণ মানুষ আর মধ্যবিত্তের কাছে খুব কদর ভাঙ্গাড়ি ব্যবসার। পুরাতন লোহালক্কড়, সেকেন্ড হ্যান্ড আসবাব এবং বিল্ডিং ভাঙার পর অবশিষ্ট দরজা জানালা বিক্রির ব্যবসাই ভাঙ্গারি নামে পরিচিত। শীত মৌসুমে এই ব্যবসার জোয়ার থাকলেও এবার সেই জোয়ারে ভাটার টান পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। করোনার পর বন্যা এবং নিলামে মালামাল বিক্রি কমে যাওয়াতেই এমন হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
ভাঙ্গাড়ি মালামালের জন্য সিলেটে সবচেয়ে বেশি সমাদৃত নগরীর কাজিরবাজার। নানান ধরনের ভাঙ্গারি পণ্য নিয়ে এখানে গড়ে উঠে অনেকগুলো দোকান। গরিব এবং মধ্যবিত্তের কাছে কদর থাকলেও প্রয়োজনে সকল শ্রেণির লোকজনের আনাগোনা এসব দোকানে। পুরাতন লোহা ও কাঠের দরজা-জানালা, রড, পাইপ, লোহার যন্ত্রাংশ, পুরাতন ব্যবহৃত কাঠ ও লোহার চেয়ার, টেবিল, আলমারি, দোকানের ডেকোরেশন, পুরাতন থাই এর মালামাল ইত্যাদির জন্যই এখানে ক্রেতারা বেশি এসে থাকেন। মূলত রিপিংয়ারিং কাজ এবং সাময়িক কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্যই এখান থেকে পণ্য কিনে থাকেন তারা। শহরের কিছু কিছু এলাকায় এসব পণ্য বিক্রি হলেও এখানকার সবচেয়ে বেশি ক্রেতা অপেক্ষাকৃত গরিব অঞ্চলের। সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের হাদারপার এবং সুনামগঞ্জ অঞ্চলে তারা সবচেয়ে বেশি মালামাল বিক্রি করে থাকেন বলে এক বিক্রেতা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক বিক্রেতা বলেন, একসময় ভাঙ্গাড়ি ব্যবসার খুব রমরামা অবস্থা থাকলেও এখন সেই দিন নেই। বিকেল ৩টা পর্যন্ত কোনো বনিবাট্টাই করা যায়নি। অথচ এখন ব্যবসার ভরা মৌসুম। এই সময় বৃষ্টিবাদলা না থাকায় লোকাজন বাড়িঘরে সংস্কার কাজ করেন। তাই বিক্রি ভালো হয়। সুনামগঞ্জ অঞ্চলে এই সময় গাড়ি গাড়ি মাল বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার বন্যায় এসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয় তাই সেখানকার লোকজনের কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই। তারা কমদামে মাল নেওয়ার জন্য আমাদের কাছে আসেন। আমরা পুরতন ভালো মানের মালামালের পাশাপাশি কমদামে নতুন নতুন কিছু দরজা জানালাও বিক্রি করে থাকি। তিনটি গোডাউনে মাল পড়ে আছে। এখন কোনোরকমে দোকান চালিয়ে টিকে আছি।
এ ব্যাপারে কাজিরবাজারের পুরাতন ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মাসুম ট্রেডার্সের কর্ণধার বেলাল আহমদ বলেন, করোনার ক্ষতিই পুষিয়ে ওঠা যায়নি, এরমধ্যে সিলেটে বন্যা এসে হানা দেয়। বন্যার কারণে ব্যবসার অবস্থা এখন ভাটার দিকে। গেল বছরের মাঝামাঝিতে দুই দফা বন্যায় যেসকল এলাকায় তাদের কাস্টমার বেশি সেসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের মানুষের কাছে টাকা নেই।
তিনি বলেন আমরা ফেরিওয়ালা ও বিভিন্ন জায়গা থেকে নিলামে মালামাল সংগ্রহ করে থাকি। তবে বেশিরভাগ মাল ফেরিওয়ালা থেকেই সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন জায়গায় বিল্ডিং মালিক ও অন্যান্য জায়গা থেকে মালামাল সংগ্রহ করে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। নিলাম থেকে এখন আগের মতো মাল পাওয়া যায় না। যারা নিলাম করেন তারা সরাসরি কিংবা স্থায়ীভাবে দোকান দিয়েই নিজেরাই বিক্রি করে থাকেন। এসব নানান কারণে ভাঙ্গাড়ি ব্যবসার আগের সেই দিন এখন নেই।