এখনো বাকী গত মওসুমের বোরো’র পরিসংখ্যান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:০১:০৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সারাদেশে চলছে বোরো’র চারা রোপণ কার্যক্রম। অথচ এখনো গত বোরো মওসুমের চাল উৎপাদনের পরিসংখ্যান চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সাধারণত প্রতি ফসলের ক্ষেত্রেই উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারো ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যের পরিসংখ্যানে বড় গরমিল থাকে। তাই আমন, আউশ, বোরো, পাট, গম ও আলু উৎপাদনের পরিসংখ্যান যৌথভাবে করা হয়। বিবিএস ও ডিএই ছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয়, ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (এফপিএমইউ) ও বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) সমন্বয়ে এ পরিসংখ্যান করা হয়।
বিগত বছরগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বোরো মওসুমের উৎপাদন পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে সাধারণত আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে তথ্য চূড়ান্ত করা হয়। তবে এবার ডিসেম্বর পেরিয়ে গেলেও বোরো মৌসুমের ফলনের চূড়ান্ত তথ্য তৈরি করতে পারেনি বিবিএস। সাধারণত জুনের মধ্যেই বোরোর ফসল কর্তন শেষ হয়। এবার ফসল কাটার পর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এর চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ হয়নি।
জানা গেছে, বোরো উৎপাদন নিয়ে বিবিএস ও ডিএইর তথ্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য থাকায় এবার দেরি হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, বিবিএসের গাফিলতির কারণেই এবার চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশে দেরি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৯ লাখ ৫১ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমি থেকে বোরো মৌসুমের ফলন কেটে ঘরে তোলা হয়েছে। এসব জমিতে চাল উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৯৮ টন। গড় ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ২৩ টন।
বিবিএস ও ডিএই সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন জেলার উৎপাদনের তথ্যে বড় ধরনের গরমিল থাকায় এবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেরি হচ্ছে। এ নিয়ে সম্মিলিতভাবে একাধিক সভাও করেছেন সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা। প্রথমদিকে কয়েকটি জেলায় তথ্যের বড় গরমিল পাওয়া যায়। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ, মাগুরা, বরিশাল, ভোলা ও গোপালগঞ্জ-এই ১১টি জেলায় ১ লাখ হেক্টরেরও বেশি গরমিল পাওয়া যায়। বেশি ফারাক রয়েছে নোয়াখালী ও ভোলা জেলার তথ্যে। বুধবার বোরো মৌসুমের উৎপাদনসংক্রান্ত একটি সভা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএইর এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বিবিএসের পর্যাপ্ত জনবল নেই। একজন দিয়ে কীভাবে পুরো উপজেলার তথ্য সংগ্রহ করে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এতে শুধু ধান নয়, প্রায় সব ফসলেই ডিএইর সঙ্গে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। ফলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কারটা গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। বিবিএস থেকে বোরো মৌসুমের উৎপাদনের তথ্য চূড়ান্ত করতে গাফিলতি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সভা ডাকতেও দেরি হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ভুল তথ্য এবং তা যথাসময়ে পেতে হবে। দেশে কেমন চাল উৎপাদন হয়েছে তার ভিত্তিতেই নীতি প্রণয়ন করে সরকার। চাল আমদানি করতে হবে, নাকি হবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এত দেরি হলে কীভাবে হবে? বিবিএস-ডিএই দুটো প্রতিষ্ঠানের তথ্যেই বড় ফারাক থাকে। যদিও এখন কিছুটা কমে এসেছে। আরেকটি বোরো মৌসুম চলে এসেছে। এখনো তথ্য চূড়ান্ত না হলে তো মুশকিল। ডিজিটালাইজেশনের ওপর জোর দিতে হবে। যেন কৃষকের তথ্য মাঠ থেকেই সেন্ট্রালে চলে আসে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে অনেক আগেই বোরোর প্রাথমিক তথ্য দেয়া হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এবার আমনেরও প্রায় সব জমির ধান কর্তন হয়ে গেছে। এ তথ্যও আমাদের তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু দেখা যাবে, আমনের চূড়ান্ত তথ্য তৈরি করতেও আগামী আমন মৌসুম চলে আসবে। আট-দশ মাস লেগে যায়। ডিএই প্রায় ১৪ হাজার ব্লক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করে। এরই মধ্যে বোরোর আবাদ শুরু হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাঠ থেকে পাওয়া তথ্য আমরা দিয়েছি। তারা কীভাবে তথ্য প্রকাশ করবে সেটা তাদের বিষয়।’ বিবিএসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বোরো মৌসুমের তথ্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তথ্য যাচাই-বাছাই হচ্ছে। চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে।