কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ৫:৫৫:২৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মীসভাকে ঘিরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর ৩ জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি হলের আবাসিক কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. এমদাদুল হোসেন শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদীয় ছাত্রলীগের কর্মীসভা ডেকেছিলেন। তবে দলের অন্য একটি বলয়ের নেতা-কর্মীরা সভা না করতে বলে। এ নিয়ে বিরোধের জেরে দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছিলো।
একপর্যায়ে বেলা পৌনে ৩টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শরীফ হোসাইন, সাব্বির মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসাইন, আকাশ ভ‚ইয়া ও প্রান্ত ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মীসভায় বাঁধা দিলে দুইপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দু’পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপে অন্তত ১০ জন আহত হন। আহত নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টার ও বাইরে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর ৩ জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সহ সভাপতি সাব্বির মোল্লা’র নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা সভাপতি আশিকুর রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন শাহপরান হলের বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন অনুষদীয় কর্মিসভা আয়োজনের নির্দেশনা ছিল। শুক্রবার কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন।
সহসভাপতির শরিফ হোসেন বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুষদীয় কর্মীসভা ডেকেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি আংশিক হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে এবং হল কমিটি না করেই অনুষদীয় কমিটি ঘোষণা করে সাংগঠনিক ইউনিটের কাজ করতে চেয়েছিলেন তারা। কর্মীসভাও করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তৃণমূল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের সঙ্গে ও সহসভাপতি-সাংগঠনিক সম্পাদকের পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিপক্ষে নই, তবে কেন্দ্র ঘোষিত সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলার জন্য বারবার অনুরোধ করছি।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ৩০ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ২০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হন মো. এমাদুল হোসেন। সে সময় কমিটি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি না হলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে বর্তমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতাকে মানতে পারছেন না কিছু নেতা-কর্মী। এ নিয়ে কমটির মধ্যেই বিদ্রোহী একটি বলয় তৈরি হয়। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কেক কেটে উদ্যাপন করা হয়েছে। আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই বিরোধী পক্ষও কেক কেটে উদ্যাপন করেছে। এসব নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে। দুই পক্ষ ঢিল ছোড়াছুড়ি করছে। নেতাদের ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।